কোলন ক্যান্সার বা মলাশয়ের ক্যান্সার সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আলোচনা সভায় আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো কোলন ক্যান্সার বা মলাশয়ের ক্যান্সার। মানবদেহের যে অংশে পানি শোষিত হয় এবং অবশিষ্ট বর্জ্য পদার্থ মল হিসেবে সংরক্ষণ করে মলত্যাগ এর পূর্ব পর্যন্ত অংশের নাম হল কোলন। এটা দেহের পরিপাকতন্ত্রের শেষ অংশ। আর দেহের এই অংশে অনিয়ন্ত্রিত কোষ বৃদ্ধির কারণে সৃষ্টি হয় ক্যান্সার। যাকে বলা হয় কোলন ক্যান্সার। বন্ধুরা, আজ আমরা আপনাদের জানাবো এ কোলন ক্যান্সার হওয়ার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে। আসুন নিচে বিস্তারিত জানা যাক।
বন্ধুরা, সাধারণত পুরুষদের কোলন ক্যান্সার বেশি হয়ে থাকে। ৫০ বছর বয়সের বেশি বয়সীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। ইদানিং অবশ্য অল্প বয়সীদের আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কা জনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ের এই ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হওয়া সম্ভব।
কোলন ক্যান্সার হওয়ার কারণ :
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা এনএইচএস'এর তথ্য অনুযায়ী কোলন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায় না, তবে কিছু কিছু বিষয় এই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সেগুলো হল:
বয়স - কোলন ক্যান্সারে ভুগতে থাকা প্রতি ১০ জনের ৯ জনের বয়সই ৬০ বা তার চেয়ে বেশি।
খাদ্যাভ্যাস - অতিরিক্ত মাংস খাওয়া এবং খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের স্বল্পতা থাকলে ঝুঁকি বাড়ে।
ওজন - অতিরিক্ত ওজন যাদের রয়েছে, তাদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
ব্যায়াম - যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা হলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
মদ্যপান ও ধূমপান- মদ্যপান ও ধূমপান কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পারিবারিক ইতিহাস - পরিবারের কোনো সদস্যের (বাবা, মা বা ভাই, বোন) যদি ৫০ এর কম বয়সে কোলন ক্যান্সার হয়, তাহলে ঐ ব্যক্তিরও ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।
আরো পড়ুনঃ জরায়ু ক্যান্সার কি এবং এর লক্ষণ সম্পর্কে জানুন
কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ :
প্রাথমিকভাবে কোলন ক্যান্সার নির্ণয় করা অত্যন্ত কঠিন। কেননা কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ অতি সহজে বোঝা যায় না। কোলন বা মলাশয়ের কোন জায়গায় ক্যান্সার রয়েছে তার উপর নির্ভর করে উপসর্গের বিভিন্নতা দেখা যায়।
১। হঠাৎ করে মল ত্যাগের প্রয়োজনের ব্যাপক তারতম্য অনুভূত হলে সেটা কোলন ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ। তখন পাকস্থলীর কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন ঘটে। যেমন রোগী সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশি মলত্যাগ করে এবং মল অপেক্ষাকৃত তরল হয়ে থাকে।
২। হঠাৎ বমি বমি ভাব হওয়া, ওজন অনেক কমে যাওয়া ও গা গুলিয়ে ওঠা কোলন ক্যানসারের লক্ষণ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
৩। কোলন ক্যানসারের রোগীদের মল ত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভূত হতে পারে। মলত্যাগের পরেও কখনো কখনো মল রয়ে যাওয়ার অনুভূতি দেখা যায়। সরু ফিতের মতো মল নির্গত হওয়াকেও কোলন ক্যানসারের উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
৪। পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা কোলন ক্যানসারের অন্যতম মুখ্য একটি উপসর্গ। আপনার যদি কোন জানা কারণ ছাড়াই পেটে ব্যাথা হয়, দূর না হয় বা খুব বেশি ব্যাথা হয় তাহলে এটাকে কোলন ক্যানসারের উপসর্গ মনে করা হয় । অনেক কিছুই পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে, তবে আপনার অস্বাভাবিক বা ঘন ঘন পেটে ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ কিছু নিয়ম মেনে নিয়ন্ত্রণ করুন আপনার উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল
কোলন ক্যান্সার নির্ণয় :
কোলন ক্যান্সার ডায়াগনোসিসের জন্য কোলন্সকোপি করে বায়োপসি করা হয়। বায়োপসির মাধ্যমে ক্যান্সার শনাক্তের পর সিটি স্ক্যান করে ক্যান্সারের ধাপ নির্ণয় করা হয়। রক্তে এন্টিজেনের (CEA) পরিমাণ নির্ণয় করেও ক্যান্সারের অবস্থা বোঝা যায়।
কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসা :
সার্জারি বা অস্ত্রোপচার : কোলন ক্যান্সারে হস্তক্ষেপ করার জন্য সাধারণত সার্জারি বা অস্ত্রোপচার প্রথম শাড়ির পছন্দ হিসেবে ধরা হয়, পুষি হত প্রাথমিক পর্যায়ের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে। টিউমার থেকে সরানো হয় এবং সংলগ্ন লিম্ফ নোড (ক্ষতিকর পদার্থ ফিল্টার কারি) গুলিও সরানো হয়। পিছনের দিকে সাধারণত অন্ত্রটিকে সেলাই করা হয় তবে, কখনো কখনো মলদ্বার সরিয়ে ফেলা হয় এবং মল সংগ্রহের জন্য কোলোস্টোমি ব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
কেমোথেরাপি : কেমোথেরাপি হলো ক্যান্সার বিরুদ্ধ ড্রাগ বা ওষুধের ব্যবহার, যার মাধ্যমে খুবই দ্রুত বিভাজিত হওয়া কোষগুলি যা ক্যান্সারের কারণ হয় তার বৃদ্ধি কে ধীর গতিতে অথবা বন্ধ করতে সাহায্য করে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকা সত্ত্বেও, কেমোথেরাপি ক্যান্সার চিকিৎসার বিকল্প হিসেবে এখনো সর্বাধিক রূপে ব্যবহার করা হয়। রেডিয়েশন (তেজস্ক্রিয়) এবং সার্জারি থেকে ভিন্ন যা কেবল নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকা ক্যান্সার কোষ গুলি গিরি চিকিৎসা করে সেখানে কেমোথেরাপির ড্রাগস বা ওষুধগুলি শরীরের ভিন্ন ভিন্ন অংশে মেটাস্টেটেড (ছড়িয়ে পড়া) ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলতে পারে।
রেডিয়েশন থেরাপি : রেডিয়েশন থেরাপি হলো এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসা যা অতি উচ্চমাত্রার রেডিয়েশন বিম্ বা তেজস্ক্রিয় রশ্মি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলিকে হত্যা করতে, টিউমার গুলিকে সংকুচিত করতে। রেডিয়েশন ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলে তাদের ডিএনএ গুলিকে ধ্বংস করার মাধ্যমে। ক্যান্সার কোষগুলির ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর বিভাজিত হতে পারে না এবং তার ফলে মারা যায়। তখন সেগুলি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অপসারিত হয়ে যায়।
আরো পড়ুনঃ ক্যান্সার হতে দূরে রাখবে এইসব পুষ্টিকর খাবার গুলো
টার্গেটেড (নির্দিষ্ট) ড্রাগ থেরাপি : টার্গেটের থেরাপি হলো এক ধরনের ক্যান্সার চিকিৎসা যা ড্রাগ বা ক্যান্সারের ওষুধ গুলির ব্যবহার করে। যাই হোক এটি প্রচলিত কেমোথেরাপি থেকে ভিন্ন হয়, চা ড্রাগ বা ওষুধগুলি ব্যবহার করে ক্যান্সার কোষগুলিকে মেরে ফেলে। টার্গেটেড থেরাপির মাধ্যমে, ক্যান্সারের নির্দিষ্ট জিনগুলি, প্রোটিন গুলি, টিস্যু বা তন্ত্র গুলির বহিরঅংশ যাও ক্যান্সারের বৃদ্ধি এবং বেঁচে থাকতে সাহায্য করে তাকে টার্গেট বা মূল লক্ষ্য করা হয়। টার্গেটেড থেরাপি সাধারণত কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে করা হয়ে থাকে।
ইমিউনোথেরাপি : ইমিউনোথেরাপি (বায়োলজি থেরাপি নামেও যাহা পরিচিত) এক ধরনের নব্য চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বুস্ট বা বাড়িয়ে তোলা হয় শরীরকে নিজের থেকে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করার জন্য।
ইমিউনোথেরাপি : রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা ব্যবস্থাকে কার্যকর ভাবে উন্নতি বা পুনরুদ্ধার করতে শরীরের মাধ্যমে সৃষ্ট বা পরীক্ষাগারে তৈরি পদার্থ ব্যবহার করে।
আরো পড়ুনঃ রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি লক্ষণ দেখা দেবে
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আমাদের আজকের আয়োজন আপনাদের ভালো লেগেছে। এই ধরনের উপকৃত পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট Lifecyclebd.com এর পাশেই থাকুন। আপনাদের সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ।