এই গরমে হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে জানুন হিট স্ট্রোক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আলোচনা সভায় আপনাদের স্বাগতম। আশা করি সবাই ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। তবে এই গরমে সুস্থ থাকাটা মোটেও সহজ নয়। তীব্র গরমে নানা অসুখের সাথে সাথে বাড়ছে হিপ স্ট্রোকের ঝুঁকি। এই সময় যখন তখনই হতে পারে হিট স্ট্রোক। তাই এই বিষয়ে আমাদের সবারই সচেতন থাকা জরুরী। বন্ধুরা আপনাদের সুস্থতার কথা বিবেচনা করে আজ আমরা আপনাদের হিট স্ট্রোক সম্পর্কে নানা তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করব। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন। 


বন্ধুরা এই গরমে ঘরের বাইরে বের হলেই রোদে যেন শরীর পুড়ে যায়। অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর হয়ে যায় নিস্তেজ। বেড়ে যায় নানা অসুখ বিসুখ। হিট স্ট্রোক তাদের মধ্যে ভয়ংকর। এতে আক্রান্ত হতে পারে ছোট বড় সবাই। আসুন আজ আমরা জেনে নেই হিট স্ট্রোক সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য। আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে ধাপে ধাপে সব তথ্য সমূহ তুলে ধরা হলো। 

হিট স্ট্রোক কি :

গরমের সময়ের মারাত্মক একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হল হিট স্ট্রোক। এটা একটি গুরুতর তাপজনিত অসুস্থতা। অতিরিক্ত গরমে শরীর যখন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়, ঘামের প্রক্রিয়া শরীরের তাপমাত্রা কমাতে ব্যর্থ হয় তখন হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোক হলে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হতে পারে। আর তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করলে হিট স্ট্রোক স্থায়ী পঙ্গুত্ব বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ চিনে নিন রাসেল ভাইপার সাপটি এবং জেনে রাখুন এর থেকে বাঁচার উপায়

হিট স্ট্রোক যাদের বেশি হয় :

প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্রতায় যে কারও হিট স্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন—

* শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে ভোগেন কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

* যাঁরা দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন, তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যেমন কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক।

* শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।

* কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষণ্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান

হিট স্ট্রোকের লক্ষণ :

১. শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়া,

২. গরমে অচেতন হয়ে যাওয়া,

৩. মাথা ঘোরা,

৪. তীব্র মাথাব্যথা,

৫. ঘাম কমে যাওয়া,

৬. ত্বক গরম ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া ৭. শারীরিক দুর্বলতা ও পেশিতে টান অনুভব করা,

৭. বমি হওয়া,

৮. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া,

৯. শ্বাস কষ্ট,

১০. মানসিক বিভ্রম,

১১. খিঁচুনি।

আরো পড়ুনঃ বর্ষা মানেই বাঙালির প্রিয় সরষে ইলিশ

হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা :

কারও হিট স্ট্রোক হলে বা অচেতন হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো :

১. হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে নিয়ে যেতে হবে।

২. রোগীর শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় কাপড় খুলে ফেলতে হবে।

৩. রোগীর শরীরে বাতাস করতে হবে। কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে হবে।

৪. শরীরের তাপমাত্রা কমাতে বগল, ঘাড়, পিঠ ও কুচকিতে আইসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে।

৫. কারও যদি শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও মাথা ঝিমঝিম করে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ শরীর সুস্থ রাখতে নারীদের যে খাবারগুলো গ্রহণ করা জরুরী

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় :

১. ঢিলেঢালা, হালকা, হালকা রঙের পোশাক পরুন।

২. ঠান্ডা তরল পান করুন এবং ডিহাইড্রেশন হওয়া প্রতিরোধ করুন।

৩. অ্যালকোহল আপনাকে দ্রুত ডিহাইড্রেট করতে পারে, এটি এড়িয়ে চলুন।

৪. শসা, তরমুজ, ডালিম এবং কলা উপভোগ করুন।

৫. গরম পরিবেশে জোরালো কার্যকলাপে নিয়োজিত হবেন না।

৬. অ্যারোবিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অ্যাকোয়া ব্যায়াম এবং সাঁতার কাটাতে লিপ্ত হন।

৭. বাইরে থাকলে ছায়ায় নিয়মিত বিশ্রাম নিন এবং ঘন ঘন তরল পান করুন।

৮. ফ্যান সাহায্য করতে পারে কিন্তু বর্ধিত গরম আবহাওয়ায়, তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই সবচেয়ে ভালো উপায়।

আরো পড়ুনঃ দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু চমৎকার উপায়

৯. সম্পূর্ণ আচ্ছাদন, কিন্তু ঢিলেঢালা পোশাক, টুপি, সানগ্লাস এবং একটি সানস্ক্রিন SPF 15 দিয়ে নিজেকে রোদে পোড়া থেকে রক্ষা করুন।

১০. শিশুকে (কোন ব্যক্তিকে) গাড়িতে 5 - 10 মিনিটের বেশি সময় ধরে অযত্নে রাখবেন না।

১১. নিচু এবং উচ্চতা অতিক্রম করার আগে ভালভাবে মানিয়ে নিন, বিশেষত, যখন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জায়গা থেকে বাইরে যাওয়ার সময়।

১২. আপনি হিট স্ট্রোকের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকলে, সমস্ত প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং নিশ্চিত করুন যে কাছাকাছি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা পরিষেবা রয়েছে।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,   হিট স্ট্রোক হলো একটি প্রাণঘাতী অবস্থা, যেখানে রোগীর শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। এটি গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় বেশি হয়। আমাদের দেশে এ মুহূর্তে অতিরিক্ত গরম পড়ছে। এ সময়ই হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই আমাদের গরমের এই সময়টায় সাবধানে থাকতে হবে। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url