চিনে নিন রাসেল ভাইপার সাপটি এবং জেনে রাখুন এর থেকে বাঁচার উপায়
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আপনারা নিশ্চয়ই জানেন বর্তমানে বাংলাদেশের নতুন আতঙ্কের নাম রাসেল ভাইপার। কেননা দেশের বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়েছে বিষধর এই সাপ। ধান ক্ষেত থেকে শুরু করে বাড়ির আঙ্গিনার যেকোনো জায়গাতেই মিলছে এই সাপের দেখা। দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় ভয়ংকর রাসেল ভাইপার নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হচ্ছে। তাই সবাইকে সাবধানতা অবলম্বনের অনুরোধ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ' পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় '। তাই বন্ধুরা আজ আমরা আপনাদের রাসেল ভাইপার সাপটি চিনবেন কিভাবে,রাসেল ভাইপার সাপের কামোর এড়াতে করণীয়,রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে করণীয়, রাসেল ভাইয়ের সাপ কামড়ালে কি করবেন না ইত্যাদি সম্পর্কে জানাতে চেষ্টা করব।
বন্ধুরা, বর্ষার মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের এক আতঙ্কের নাম রাসেল ভাইপার। বিশেষ করে পদ্মা-যমুনা নদী ও তার অববাহিকায় বেশি দেখা মিলছে এই বিষধর সাপের। এ অবস্থায় রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচার উপায় আমাদের সবারই জেনে রাখা জরুরি। আসুন জেনে নিন রাসেল ভাইপার সাপটি সম্পর্কে বিস্তারিত -
রাসেল ভাইপার সাপটি চিনবেন যেভাবে :
চন্দ্রবোড়ার দেহ মোটা এবং লেজ ছোট ও সরু। প্রাপ্তবয়স্ক সাপের দেহের দৈর্ঘ্য সাধারণত ১.২৪ মি (৪ ফুট ১ ইঞ্চি)। তবে দেহের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ১.৮ মিটার(৫ ফুট ৯ ইঞ্চি) পর্যন্তও হয়ে থাকে। এর মাথা চ্যাপ্টা, ত্রিভুজাকার এবং ঘাড় থেকে আলাদা। নাকের ছিদ্র বড় এবং মাথার শীর্ষবিন্দু স্বতন্ত্রভাবে খণ্ডিত আবরণে আচ্ছাদিত। মাথা আকারে বেশ বড় এবং রঙ হলুদ বা সোনালি হলুদ। আর এর চারপাশে থাকে দশ থেকে পনেরোটি বৃত্তাকার আঁশের বেষ্টনী। দুই জোড়া চোয়ালের ঢালের মধ্যে সামনের জোড়াটি একটু বেশি প্রসারিত। মুখের ভেতর দুটি ম্যাক্সিলারি হাড়ের সঙ্গে এক জোড়া করে মোট ৬টি বিষদাঁত। তবে একদম সামনের জোড়া দাঁতগুলো বেশ প্রকাণ্ড এবং সক্রিয় থাকে। দেহের পেছনে ছোট লেজের দৈর্ঘ্য সম্পূর্ণ দেহের মাত্র ১৪ শতাংশ।
রাসেল ভাইপারের শরীরে রয়েছে গভীর হলুদ এবং বাদামি মাটির রঙের প্যাটার্ন। শরীরের দৈর্ঘ্য বরাবর রয়েছে ৩ সারি গাঢ় বাদামি দাগ। আবার এই দাগগুলোর প্রত্যেকটির চারপাশে রয়েছে একটি করে কালো বলয়। এর বাইরের সীমানা সাদা বা হলুদ হয়ে প্রান্তের দিকে গাঢ় হয়ে গেছে। মাথায় রয়েছে এক জোড়া গাঢ় ছোপ, যার প্রত্যেকটি একটি করে গোলাপি বা বাদামি রঙের ‘‘ভি’’ বা ‘‘এক্স’’ আকৃতি হয়ে মাথার শীর্ষবিন্দুতে মিলেছে। শরীরের সামনে ও পেছনে সর্বাঙ্গজুড়ে সাদা, হলুদ বা গোলাপি রঙের সঙ্গে কালো দাগের অনিয়মিত ও বিক্ষিপ্ত নকশা।
রাসেল ভাইপার সাপের কামড় এড়াতে করণীয় :
# যেসব এলাকায় রাসেল ভাইপার দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন।
# লম্বা ঘাস, ঝোপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন।
# গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না।
# সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট ও লম্বা প্যান্ট পরুন।
# রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চ লাইট ব্যবহার করুন।
# বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখুন।
# পতিত গাছ, জ্বালানি লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
# সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না।
# প্রয়োজনে জাতীয় হেল্প লাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করুন।
রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে করণীয় :
# যেখানে কামড় খেয়েছেন, শরীরের সেই জায়গাটি নড়াচড়া করা যাবে না। এই সাপ পায়ে দংশন করলে বসে যেতে হবে, হাঁটা যাবে না। হাতে দংশনে হাত নড়াচড়া করা যাবে না। হাত-পায়ের গিরা নাড়াচাড়ায় মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে গিয়ে বিষক্রিয়া করতে পারে।
# আক্রান্ত স্থান সাবান দিয়ে আলতোভাবে ধুতে হবে অথবা ভেজা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে মুছতে হবে।
# শরীরে ঘড়ি বা অলঙ্কার বা তাবিজ, তাগা ইত্যাদি থাকলে খুলে ফেলুন।
# আক্রান্ত স্থানে কাটবেন না, সুঁই ফোটাবেন না, কিংবা কোনো রকম প্রলেপ লাগাবেন না বা অন্য কিছু প্রয়োগ করা উচিত নয়।
# সাপে কাটলে ওঝার কাছে গিয়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
# যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে যান।
# আতঙ্কিত হবেন না, রাসেল ভাইপারের বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিষ প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম আছে এবং সব জায়গায় হাসপাতালগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রাসেল ভাইপার সাপ কামড়ালে যা করবেন না:
* কামড়ের স্থান থেকে চুষে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।
* কামড়ের স্থান আরও কেটে বা সেখান থেকে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।
* বরফ, তাপ বা কোনও ধরনের রাসায়নিক ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করা।
* আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা ফেলে যাওয়া।
* কামড়ের স্থানে শক্ত করে বাঁধা। এর ফলে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে না এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গুও হতে পারেন।
* বিষধর সাপ ধরা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এমনকি মৃত সাপও সাবধানতার সাথে ধরা উচিৎ, কারণ সদ্যমৃত সাপের স্নায়ু মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সতেজ থাকতে পারে এবং তখন তা দংশন করতে পারে।
রাসেল ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে করণীয়ঃ
বেজি, গুঁইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ রাসেল ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এ সকল বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেল ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা ও এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন, রাসেল ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬(১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। রাসেল ভাইপার ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সাপের বিষ হতে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ মারা দণ্ডনীয় অপরাধ, সাপ মারা হতে বিরত থাকুন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ বন বিভাগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও সচেতন সমাজের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো। পরিস্থিতি সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী আপডেট প্রদান করা হবে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ।