পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও পারণের সঠিক সময়সূচি জেনে নিন

হরেকৃষ্ণ পাঠক বন্ধুরা🙏 সবাইকে নমস্কার। আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় সবাই ভালো আছেন। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের নির্জলা একাদশী ব্রতের নাম পান্ডবা নির্জলা একাদশী। আগামী ১৮ ই এপ্রিল  রোজ মঙ্গলবার আমাদের পালন করতে হবে এই অতি পবিত্র পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত। বছরের অন্যান্য একাদশী পালনে অজান্তে যদি কখনো কোন ভুল হয় তাহলে এই একটি মাত্র একাদশী নিষ্ঠার সাথে পালন করলে সকল দোষ দূর হয়। সনাতন ধর্ম অনুসারে একাদশী তিথি অতি পূণ্য প্রীতি হিসেবে বিবেচিত। কেননা এই তিথি ভগবানের প্রিয় তিথি। একাদশী ব্রত পালন করে একাদশী মাহাত্ম্য  পাঠ ও শ্রবণ করলে শ্রী হরির কৃপা লাভ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া যায়। বন্ধুরা আজ আমরা আপনাদের জানাবো অতি পবিত্র পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য,একাদশী ব্রত পালনের নিয়মাবলী, একাদশীতে নিষিদ্ধ খাদ্যশস্য,পরের দিন পারণের সময়সূচী ও পারণের মন্ত্র।


বন্ধুরা, আমাদের একাদশী ব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নিরন্তন ভগবানকে স্মরণ করা। এই ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয় তা অশ্বমেধ,রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞ দ্বারা হয় না। এই দিন ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। আসুন জেনে নেই অতি পবিত্র পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য -

পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য :

আমার শরণাপন্ন হয়ে এই নির্জলা একাদশী ব্রত পালন করে তারা সর্বপাপ মুক্ত হয়। বিশেষত কলিযুগে ধন-সম্পদ দানের মাধ্যমে সদ্গতি বা স্মার্ত সংস্কারের মাধ্যমেও যথার্থ কল্যাণ লাভ হয় না। কলিযুগে দ্রব্যশুদ্ধি নেই। কলিতে শাস্ত্রোক্ত সংস্কার বিশুদ্ধ হয় না। তাই বৈদিক ধর্ম কখনও সুসম্পন্ন হতে পারে না। হে ভীমসেন! তোমাকে বহু কথা বলার আর প্রয়োজন কি? তুমি উভয় পক্ষের একাদশীতে ভোজন করবে না। 


যদি তাতে অসমর্থ হও তবে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীতে অবশ্যই নির্জলা উপবাস করবে। এই একাদশী ব্রত ধনাধান্য ও পুন্যদায়িনী। যমদূতগণ এই ব্রত পালনকারীকে মৃত্যুর পরও স্পর্শ করতে পারে না। পক্ষান্তরে বিষ্ণুদূতগণ তাঁকে বিষ্ণুলোকে নিয়ে যান। 

শ্রীভীমসেন ঐদিন থেকে নির্জলা একাদশী পালন করতে থাকায় এই একাদশী ‘পান্ডবা নির্জলা বা ভীমসেনী একাদশী’ নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। এই নির্জলা একাদশীতে পবিত্র তীর্থে স্নান,দান, জপ, কীর্তন ইত্যাদি যা কিছু মানুষ করে তা অক্ষয় হয়ে যায়। যে ব্যক্তি ভক্তিসহকারে এই একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ বা শ্রবণ করেন তিনি বৈকুন্ঠধাম প্রাপ্ত হন।


একাদশী ব্রত পালনের নিয়মাবলী :

১। সমর্থ পক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার ও দ্বাদশীতে একাহার করিবেন।
২। তা হতেও অসমর্থপক্ষে শুধুমাত্র একাদশীতে অনাহার।
৩। যদি উহাতেও অসমর্থ হন একাদশীতে পঞ্চ রবিশষ্য বর্জন করতঃ ফল মূলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রহিয়াছে। সমর্থ পক্ষে রাত্রি জাগরণের বিধি আছে।
গৌড়ীয় ধারায় বা মহান আচার্যবৃন্দের অনুমোদিত পঞ্জিকায় যে সমস্ত একাদশী নির্জলা (জল ব্যতীত) থেকে পালনের নির্দেশ প্রদান করেছেন। সেগুলি করলে সর্বোত্তম হয়। নিরন্তর কৃষ্ণভাবনায় থেকে নিরাহার থাকতে অপারগ হলে নির্জলাসহ অন্যান্য একাদশীতে কিছু সবজি ফল মূলাদি গ্রহণ করতে পারেন।


যেমন-গোল, আলু, মিষ্টি আলু ও চাল কুমড়া, পেঁপে, টমেটো, ফুলকপি ইত্যাদি সবজি ঘি, বাদাম তৈল অথবা সূর্যমুখি তেল দিয়ে রান্না করে ভগবানকে উৎসর্গ করে আহার করতে পারেন। জিরা, ধনিয়া, আদা, তেজপত্র, লবন ও মরিচ ব্যবহার্য। আবার অন্যান্য আহার্য যেমন- দুধ, কলা, আপেল,কমলা, আঙ্গুর, আনারস, আখ, আমড়া, শশা, তরমুজ, বেল, নারিকেল, মিষ্টি আলু, বাদাম ও লেবুর শরবত ইত্যাদি ফল মূলাদি খেতে পারেন।

একাদশীতে নিষিদ্ধ খাদ্যশস্য :

★ ধান জাতীয় - 

চাল,মুড়ি,চিড়া,খই, শ্যামাচাল,কাউন ইত্যাদি। 

★ গম জাতীয় -  

আটা,ময়দা,সুজি,পউরুটি,হরলিক্স,বিস্কুট ইত্যাদি। 

★যব/ভূট্টা জাতীয় -

ছাতু,ভুট্টার খই ইত্যাদি। 

★ ডাল জাতীয় -

সব ধরনের ডাল। 

★ সবজি জাতীয় - 

বরবটি, শিম,মটরশুঁটি, বেগুন,টমেটো, গাজর,মূলা ইত্যাদি। 

★ তৈল জাতীয় - 

সরিষা তেল,সয়াবিন তেল,তিল তেল ইত্যাদি।

উপরোক্ত পঞ্চরবি শস্যের যে কোন একটি একাদশীতে গ্রহণ করলে ব্রত ভঙ্গ হবে। উল্লেখ্য যারা সাত্ত্বিক আহারী নন এবং চা, বিড়ি/সিগারেট, পান, কফি ইত্যাদি নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করেন একাদশী ব্রত পালনের সময় ঐগুলি গ্রহণ না করাই উত্তম। 

একাদশী করলে যে কেবলমাত্র নিজের জীবনের সদগতি হবে তা নয় নিজের প্রয়াত পিতা/মাতা নরকবাসী হলে তারাও নরক থেকে উদ্ধার পাবে। যদি কেউ কোন বিধি নিষেধ পালন ছাড়া উদ্দেশ্যহীন ভাবেও একাদশী থাকে তবে ঐ ব্যক্তির একাদশীর সম্পূর্ণ ফল পাবে। একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে এবং অন্যকে করালেও নরকগতি হবে। পঞ্জিকাতে একাদশী পারণের যে সময় দেওয়া থাকে সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে নিবেদন করে প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা বিধেয়। নতুবা একাদশীর কোন ফল লাভ হয় না।

পারণের সময়সূচী :

১৯শে জুন রোজ বুধবার  সকাল ৫.১৭ মিনিট হতে ৮.০০ মিনিটের মধ্যে। 

পারণ মন্ত্র :

একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব। 

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভাব।। 

এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ করতে হয়।  

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সবাই ভগবান শ্রী হরির কৃপা পেতে নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে পান্ডবা নির্জলা একাদশী ব্রত পালন করবেন। ভগবানের কৃপায় সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ। রাধে রাধে 🙏

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url