কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য
প্রিয় সনাতনী পাঠক বন্ধুরা, হরেকৃষ্ণ 🙏 সবাইকে নমস্কার। আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় সবাই ভালো আছেন। আগামীকাল ১৯ই এপ্রিল রোজ শুক্রবার আমাদের পালন করতে হবে অতি পবিত্র কামদা একাদশী ব্রত। হিন্দু ধর্ম অনুসারে একাদশী তিথি অতি পূণ্য প্রীতি হিসেবে বিবেচিত। একাদশী ব্রত পালনে সমস্ত পাপ বিনষ্ট, সর্ব সৌভাগ্য ও ভগবান শ্রী হরির প্রীতি লাভ হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ৮ থেকে ৮০ বছর বয়সের যেকোনো ব্যক্তির ভক্তি সহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য। একাদশী ব্রত পালন করে একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণ করলে শ্রী হরির কৃপা লাভ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া যায়। বন্ধুরা আজ আমরা আপনাদের জানাবো অতি পবিত্র কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য, পরের দিন পারণের সময়সূচী এবং পারণের মন্ত্র।
বন্ধুরা, আমাদের একাদশী ব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নিরন্তন ভগবানকে স্মরণ করা। এই ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয় তা অশ্বমেধ,রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞ দ্বারা হয় না। এই দিন ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। আসুন জেনে নেই অতি পবিত্র কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য -
কামদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য:
চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের 'কামদা' একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য বরাহপুরাণে বর্ণিত হয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির বললেন—হে বাসুদেব! আপনি কৃপা করে আমার কাছে চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর মহিমা কীর্তন করুন।
আরো পড়ুনঃ অলৌকিক সজনে পাতার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
শ্রীকৃষ্ণ বললেন—হে মহারাজ! এই একাদশী ব্রত সস্পর্কে এক বিচিত্র কাহিনী বর্ণনা করছি আপনি একমনে তা শ্রবণ করুন। পুর্বে মহর্ষি বশিষ্ঠ মহারাজ দিলীপের কৌতূহল নিবারণের জন্য এই ব্রতকথা কীর্তন করেছিলেন। ঋষি বশিষ্ঠ বললেন—হে মহারাজ!
চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের একাদর্শীর নাম 'কামদা'। এই তিথি পাপনাশক ও পুণ্যদায়িনী। পূর্বকালে মনোরম নাগপূরে স্বর্ণনির্মিত গৃহে বিষধর নাগেরা বাস করত। তাদের রাজা ছিলেন পুণ্ডরীক। গর্ন্ধব কিন্নর ও অপ্সরাদের দ্বারা তিনি সেবিত হতেন। সেই পূরীমধ্যে অপ্সরা শ্রেষ্ঠ ললিতা ও ললিত নামে গন্ধর্ব স্বামী-স্ত্রী রূপে ঐশ্বর্য্যপূর্প এক গূহে পরম সুখে দিন যাপন করত।
একদিন পুণ্ডরীকের রাজসভায় ললিত একা গান করছিল। এমন সময় ললিতার কথা তার মনে পড়ল। ফলে সঙ্গীতের স্বর-লয়-তাল-মানের বিপর্যয় ঘটল। কর্কটক নামে এক নাগ ললিতের মনোভাব বুঝতে পারল। গানের ছন্দভঙ্গের ব্যাপারটি সে পূণ্ডরীক রাজার কাছে জানাল। তা শুনে সর্পরাজ ক্রোধভরে কামাতুর ললিতকে-'রে দুর্মতি! তুমি রাক্ষস হও' বলে অভিশাপ দান করল। সঙ্গে সঙ্গে সেই ললিত ভযঙ্কর রাক্ষসমূর্তি ধারণ করল। তার হাত দশ যোজন বিস্তৃত, মুখ পর্বত গুহা তূল্য, চোখ দুটি প্রজ্বলিত আণ্ডনের মতো, ঊর্ধ্বে আট যোজন বিস্তৃত প্রকাণ্ড এক শরীর সে লাভ করল। ললিতের এরকম ভয়ঙ্কর রাক্ষস শরীর দেখে ললিতা মহাদুঃখে চিন্তায় ব্যাকুল হলেন।
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে জবা ফুলের কেরামতি জেনে নিন
স্বেচ্ছাচারী রাক্ষস ললিত দুর্গম বনে ভ্রমণ করতে লাগল। ললিতা কিন্তু তার সঙ্গ ত্যাগ করল না। ললিত নির্দয়ভাবে মানুষ ভক্ষণ করত। এই পাপের ফলে তার মনে বিন্দুমাত্র শান্তি ছিল না। পতির সেই দুরাবস্থা দেখে ব্যথিত চিত্তে রোদন করতে করতে ললিতা গভীর বনে প্রবেশ করল।
একদিন ললিতা বিন্ধ্যপর্বতে উপস্থিত হল। সেখানে ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির আশ্রম দর্শন করে মুনির কাছে হাজির হল। তার চরণে প্রণাম করে সেখানে দাঁড়িয়ে রইল। মুনিবর জিজ্ঞাসা করলেন—হে সুন্দরী! তুমি কে, কার কন্যা, কি কারণেই বা এই গভীর বনে এসেছ? তা সত্য করে বল। তদুত্তরে ললিতা বলল—হে প্রভু! আমি বীর ধন্যা গন্ধর্বের কন্যা।আমার নাম ললিতা। আমার পতির পিশাচত্ব দূর হয় এমন কোন উপায় জানবার জন্য এখানে এসেছি।
তখন ঋষি বললেন—চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের কামদা নামে যে একাদশী আছে, তুমি সেই ব্রত যথাবিধি পালন কর। এই ব্রতের পূণ্যফল তোমার স্বামীকে অর্পণ করলে তৎক্ষণাৎ তার সমস্ত পাপ বিনষ্ট হবে।
আরো পড়ুনঃ ড্রাগন ফল কি সত্যিই উপকারী ফল
বশিষ্ঠ ঋষি বললেন—হে মহারাজ দিলীপ! মুনির কথা শুনে ললিতা আনন্দ সহকারে কামদা একাদশী পালন করল। তারপর ব্রাহ্মণ ও বাসুদেবের সামনে পতির উদ্ধারের জন্য—'আমি যে কামদা একাদশীর ব্রত পালন করেছি, তার সমস্ত ফল আমার পতির উদ্দেশ্যে অর্পণ করলাম। এই পূণ্যের প্রভাবে তাঁর পিশাচত্ব দূর হোক।' এই কথা উচ্চারণ মাত্রই ললিত শাপ মুক্ত হয়ে দিব্য দেহ প্রাপ্ত হল। পুনরায় গন্ধর্ব দেহ লাভ করে ললিতার সাথে সে মিলিত হল। তারা বিমানে করে গন্ধর্বলোকে গমন করল।
হে মহারাজ দিলীপ এই ব্রত যত্ন সহকারে সকলেরই পালন করা কর্তব্য। এই ব্রত ব্রহ্মহত্যা পাপবিনাশক এবং পিশাচত্ব মোচনকারী। এই ব্রত কথা শ্রদ্ধাপূর্বক পাঠ ও শ্রবণে বাজপেয় যজ্ঞের ফল লাভ হয়।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক রিলস থেকে ইনকামের সহজ কিছু পন্থা
পারনের সময় সূচীঃ
২০ এপ্রিল রোজ শনিবার সূর্য উদয় হতে সকাল ৯,৩০ মিনিটের মধ্যে।
পারণ মন্ত্র :
একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভাব।।
এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ করতে হয়।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সবাই ভগবান শ্রী হরির কৃপা পেতে নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে কামদা একাদশী ব্রত পালন করবেন। ভগবানের কৃপায় সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ। রাধে রাধে 🙏