পাপমোচনী একাদশী ব্রত মহাত্ম্য
প্রিয় সনাতনী পাঠক বন্ধুরা, হরেকৃষ্ণ 🙏 সবাইকে নমস্কার। আশা করি ঈশ্বরের কৃপায় সবাই ভালো আছেন। আগামী ৫ই এপ্রিল রোজ শুক্রবার আমাদের পালন করতে হবে অতি পবিত্র পাপমোচনি একাদশী ব্রত। হিন্দু ধর্ম অনুসারে একাদশী তিথি অতি পূণ্য প্রীতি হিসেবে বিবেচিত। একাদশী ব্রত পালনে সমস্ত পাপ বিনষ্ট, সর্ব সৌভাগ্য ও ভগবান শ্রী হরির প্রীতি লাভ হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ৮ থেকে ৮০ বছর বয়সের যেকোনো ব্যক্তির ভক্তি সহকারে পবিত্র একাদশী ব্রত পালন করা কর্তব্য। একাদশী ব্রত পালন করে একাদশী মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণ করলে শ্রী হরির কৃপা লাভ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হওয়া যায়। বন্ধুরা আজ আমরা আপনাদের জানাবো অতি পবিত্র পাপমোচনি একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য, পরের দিন পারণের সময়সূচী এবং পারণের মন্ত্র।
বন্ধুরা, আমাদের একাদশী ব্রত পালনের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নিরন্তন ভগবানকে স্মরণ করা। এই ব্রত পালনে যে ফল লাভ হয় তা অশ্বমেধ,রাজসূয় ও বাজপেয় যজ্ঞ দ্বারা হয় না। এই দিন ভাগবত শ্রবণে পৃথিবী দানের ফল লাভ হয়। আসুন জেনে নেই অতি পবিত্র পাপমোচন একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য -
পাপমোচনী একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য :
যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন--হে জনার্দন! চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম ও মাহাত্ম্য কৃপা করে আমাকে বলুন।
শ্রীকৃষ্ণ বললেন-- হে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির! আপনি ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন করেছেন। এই একাদশী সকল সুখের আধার, সিদ্ধি প্রদানকারী ও পরম মঙ্গলময়। সমস্ত পাপ থেকে নিস্তার বা মোচন করে বলে এই পবিত্র একাদশী তিথি 'পাপমোচনী' নামে প্রসিদ্ধ। রাজা মান্ধাতা একবার লোমশ মুনিকে এই একাদশীর কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তাঁর বর্ণিত সেই বিচিত্র উপাখ্যানটি আপনার কাছে বলছি। আপনি মনযোগ দিয়ে তা শ্রবন করুন।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ইউরিক অ্যাসিডের লক্ষণ এবং কোন খাবারগুলো পরিহার করতে হবে আপনাকে ইউরিক অ্যাসিড হলে
প্রাচীনকালে অতি মনোরম 'চৈত্ররথ' পুষ্প উদ্যানে মুনিগন বহু বছর ধরে তপস্যা করতেন। একসময় মেধাবী নামে এক ঋষি কুমার সেখানে তপস্যা করতেন। মঞ্জুঘোষা নামে এক সুন্দরী অপ্সরা তাঁকে বশীভূত করতে চাইলো। কিন্তু ঋষির অভিশাপের ভয়ে সে আশ্রমের দুই মাইল দূরে অবস্থান করতে লাগল। বীণা বাজিয়ে মধুর স্বরে সে গান করত। একদিন মঞ্জুঘোষা মেধাবীকে দেখে কামবাণে পীড়িতা হয়ে পড়ে। এদিকে ঋষি মেধাবীও অপ্সারার অনুপম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়েন। তখন সেই অপ্সরা মুনিকে নানা হাব-ভাব ও কটাক্ষ দ্বারা বশীভূত করে। ক্রমে কামপরবশ মুনি সাধন-ভজন বিসর্জন দিয়ে তার আরাধ্য দেবকে বিস্মৃত হন। এইভাবে অপ্সরার সাথে কামক্রীড়ায় মুনির বহুবছর অতিক্রান্ত হল।
মুনিকে আচার-ভ্রষ্ট দেখে সেই অপ্সরা দেবলোকে ফিরে যেতে মনস্থ করল। একদিন মঞ্জুঘোষা মেধাবী মুনিকে বলতে লাগল-- হে প্রভু , এখন আমাকে নিজ গৃহে ফিরে যাবার অনুমতি প্রদান করুন। কিন্তু মেধাবী বললেন-- হে সুন্দরী! তুমি তো এখন সান্ধ্যকালে আমার ক কাছে এসেছ, প্রাতঃকাল পর্যন্ত আমার কাছে থেকে যাও। মুনির কথা শুনে অভিশাপ ভয়ে সেই অপ্সরা আরও কয়েক বছর তার সাথে বাস করল। এইভাবে বহু বছর (৫৫ বছর ৯ মাস ৭ দিন) অতিবাহিত হল। দীর্ঘকাল অপ্সরার সহবাসে থাকলেও মেধাবীর কাছে তা অর্ধরাত্রি বলে মনে হল। মঞ্জুঘোষা পুনরায় নিজস্থানে গমনের প্রার্থনা জানালে মুনি বললেন--এখন প্রাতঃকাল, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্ধ্যা বন্দনা না সমাপ্ত করি, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি এখানে থাকো।
মুনির কথা শুনে ঈষৎ হেসে মঞ্জুঘোষা তাকে বলল-- হে মুনিবর! আমার সহবাসে আপনার যে কত বছর অতিবাহিত হয়েছে তা একবার বিচার করে দেখুন। এই কথা শুনে মুনি স্থির হয়ে দেখলেন যে, তাঁর ছাপ্পান্ন বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ব্যাক পেইন বা পিঠ ব্যাথার কারণ সমূহ
মুনি তখন মঞ্জুঘোষার প্রতি ক্রোধ পরবশ হয়ে বললেন যে-- রে পাপিষ্ঠে, দুরাচারিণী, তপস্যার ক্ষয়কারিণী, তোমাকে ধিক! তুমি পিশাচী হও। মেধাবীর শাপে অপ্সরার শরীর বিরূপ প্রাপ্ত হল। তখ তখন সে অবনতমস্তকে মুনির কাছে শাপমোচনের উপায় জিজ্ঞাসা করল।
মেধাবী বললেন-- হে সুন্দরী! চৈত্রমাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী, সর্বপাপ ক্ষয়কারিণী। সেই ব্রত পালনে তোমার পিচাশত্ব দূর হবে।
পিতার আশ্রমে ফিরে গিয়ে মেধাবী বললেন-- হে পিতা! এক অপ্সরার সঙ্গদোষে আমি মহাপাপ করেছি। এর প্রায়শ্চিত্ত কি? তা কৃপা করে আমাকে বলুন।
উত্তরে চ্যবন মুনি বললেন-- চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী ব্রতের প্রভাবে তোমার পাপ দূর হবে। পিতার উপদেশ শুনে মেধাবী সেই ব্রত ভক্তিভরে পালন করল। তার সমস্ত পাপ দূর হল। পুনরায় তিনি তপস্যার ফল লাভ করলেন। মঞ্জুঘোষাও ঐ ব্রত পালনের ফলে পিচাশত্ব থেকে মুক্ত হয়ে দিব্য দেহে স্বর্গে গমন করল।
হে মহারাজ! যারা এই পাপমোচনী একাদশী পালন করেন, তাদের পূর্বকৃত সমস্ত পাপই ক্ষয় হয়। এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়।
পারণের সময়সূচী :
৬ই এপ্রিল রোজ শনিবার সকাল ৫.৫২ মিনিট হতে ৯.৪৯ মিনিটের মধ্যে।
আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন বাদাম খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
পারণ মন্ত্র :
একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভাব।।
এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ করতে হয়।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সবাই ভগবান শ্রী হরির কৃপা পেতে নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে পাপমোচন একাদশী ব্রত পালন করবেন। ভগবানের কৃপায় সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ। রাধে রাধে 🙏