আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি, এর ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জেনে নিন

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে সংক্ষেপে AI বলা হয়। AI বর্তমানে কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। বিভিন্ন ধরনের কাজে এর বিশেষ ব্যবহার দেখা যায়। যেমন মানুষের বুদ্ধিমত্তা এবং চিন্তা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কম্পিউটার দ্বারা অনুকৃত করার চেষ্টা করা হয়। 


বন্ধুরা, আজ আমরা আপনাদের জানাবো এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি, এর ব্যবহার ও সুবিধা অসুবিধা। আসুন জেনে নেওয়া যাক -

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কী:

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা"  হলো কম্পিউটার সিস্টেমের একটি আপগ্রেডেট সংস্করণ । এটি সাধারণত মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় এমন কাজগুলি সম্পাদন করতে পারে। এসব কাজের মধ্যে যেমন রয়েছে ইনপুট করা তথ্য উপলব্ধি বা বিশ্লেষণ, তেমনি রয়েছে এসকল বিশ্লেষণ থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা। এক কথায়, মানুষ প্রতিনিয়ত যেসব কাজ করে থাকে তার অধিকাংশই ধীরে ধীরে AI আয়ত্ত্ব করে নিচ্ছে।

মানুষের চিন্তা ভাবনাকে কম্পিউটারের মধ্যে দিয়ে অসম্পূর্ণ তথ্য ব্যবহার করে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত পৌঁছানো, জটিল সমস্যার সমাধান, পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং গবেষণার কাজে ব্যবহার হয়। 

জন ম্যাকার্থি (ইংরেজি: John McCarthy) একজন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী। তিনি "কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা" ও প্রোগ্রামিং ভাষা লিস্পের জনক। তিনি " আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স " নামক পরিভাষার প্রচলন করেন।

আরো পড়ুনঃ ChatGPT কি এবং এর ব্যবহারের সুবিধা জেনে নিন

ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে:

ANI বা Artificial Narrow Intelligence: বুদ্ধিমত্তার জগতে সবচেয়ে সাধারণ এই ন্যারো এআই। এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্যই ব্যবহার হয়। যেমন দাবা খেলা, ই-কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা, সেলফ-ড্রাইভিং, স্পিচ রিকগনিশন এবং ইমেজ রিকগনিশন ইত্যাদি।

AGI বা artificial general intelligence: মানুষের মতো দক্ষতার সাথে যে কোনো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ সম্পাদন করতে পারে এই AGI । বিশ্বব্যাপী গবেষকরা এখন জেনারেল এআই দিয়ে মেশিন তৈরির দিকে বেশি মনোনিবেশ করছেন।

ASI বা Artificial Super Intelligent: এই ASI মেশিনগুলো মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ছাড়িয়ে জ্ঞানীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর সাথে মানুষের চেয়েও যে কোন কাজ নিখুত ভাবে সম্পাদন করতে পারে।এ সিস্টেমগুলো অধিক জটিল সিস্টেম। সিস্টেমগুলো এমনভাবে প্রোগ্রাম করা হয় যাতে কোনও ব্যক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়া যেকোন সমস্যার সমাধান করতে পারে।

আরো পড়ুনঃ জনপ্রিয় নেটফ্লিক্স কি এবং নেটফ্লিক্স এর ব্যবহারের নিয়ম জেনে নিন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার:

বর্তমানে আমাদের চারপাশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার হচ্ছে। আর এই ব্যবহার আমাদের সমাজকে আরো আধুনিক হয়ে উঠতে সাহায্য করছে। এটি আমাদের জীবনকে করে তুলছে আরো সহজতর। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হল-

স্বাস্থ্য পরিচর্যায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার :

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বাস্থ্য সেবায় আমাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতার করে আসছে। এখনকার দিনে যদি কারো কোন রোগ হয় সেটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রয়েছে। কি ধরনের অসুখে কি ওষধ লাগবে বা কিভাবে তার চিকিৎসা করা উচিত সেই সব বিষয়গুলোর পিছনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক ভূমিকা রয়েছে। অনেক জটিল অপারেশনও এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগে অতি সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। তাই স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশেষ ব্যবহার অতুলনীয়।

ব্যাংকিং সেক্টরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার :

ব্যাংকিং সেক্টরেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। আমরা এখন খুব সহজেই শুধুমাত্র এসএমএসের মাধ্যমে সকল টাকা-পয়সা লেনদেন করতে পারি। কাগজের টাকার ব্যবহার দিন দিন কমে আসছে। ইমেইলের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের তথ্য আপডেট করে নিতে পারে।

সিকিউরিটি এর ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার :

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে নিরাপত্তা কাজের ক্ষেত্রে। এখন বিভিন্ন সামরিক বাহিনী বা যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে যার ফলে সৈন্যদের স্ব-শরীরে ময়দানে অবস্থান করতে হয়না। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে রাডার স্থাপন করা হয় যা শত্রুর অবস্থান সম্পর্কে পূর্ব থেকে সচেতন করে দিতে পারে। নিরাপত্তার স্বার্থে ও অপরাধীকে সনাক্ত করতে সিসি ক্যামেরা এখন একটি বহুল ব্যবহৃত ডিভাইস।

আরো পড়ুনঃ ফাইভার কি ? ফাইভার থেকে সত্যিই কি ইনকাম করা যায়

ভাষা অনুবাদে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার :

অফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে ভাষা অনুবাদ করা আরো সহজলভ্য এবং নির্ভুল হয়ে উঠেছে। অনুবাদ অ্যাপ পরিষেবা গুলো AI অ্যালগরিদম ব্যবহার করে টেক্সট এবং বক্তৃতাকে রিয়েল টাইমে বুঝতে এবং অনুবাদ করতে পারে যা ভাষার বাধা ভেঙে দেয়।

শিক্ষা ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার :

শিক্ষা ক্ষেত্রেও এখন AI ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোজিত শিক্ষায় AI ব্যবহার করে একজন শিক্ষার্থী তার ভাল এবং দুর্বলতা গুলি মূল্যায়ন করতে পারে এবং পাঠ্যক্রমকে তাদের প্রয়োজন অনুসারে তৈরি করতে পারে।

পরিবহনের ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার :

স্বচালিত গাড়িগুলি পরিবহনে AI এর ব্যবহার একটি বড় উদাহরণ। এই যানবাহন গুলি AI ব্যবহার করে নেভিগেট করতে, তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বুঝতে এবং ডাইভিং সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

অনলাইন শপিং এর ক্ষেত্রে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর ব্যবহার :

আমরা সবাই কমবেশি অনলাইন থেকে শপিং করে থাকি। এই শপিং করার মাঝে কাজ করে যাচ্ছে AI। অনলাইন শপিং সিস্টেমে আমরা আমাদের নিজস্ব পছন্দ ও অপছন্দ একটি অ্যালগরিদম সৃষ্টি করে এবং পরবর্তীতে এই অ্যালগরিদম এর ভিত্তিতে আমাদের পছন্দের বস্তুকে আমাদের সামনে তুলে ধরে।

আরো পড়ুন ঃ গুগল ম্যাপ এর সাহায্যে আপনার হারিয়ে যাওয়া স্মার্টফোনটি সন্ধান করুন

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সুবিধা:

মানুষ কোন না কোন সময় ভুল করতে পারে কিন্তু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কখনো ভুল করে না যদি এর প্রোগ্রাম সঠিকভাবে করা হয়। যেহেতু এআইয়ের সিদ্ধান্তগুলো ডিজাইন করা এলোগরেদমের মাধ্যমে তাই তার কাজে কখনোই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সব সময় সঠিক তথ্য এবং সঠিক পারফরমেন্সের কারণে সময় এবং অর্থ সেভ হয় ।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধা দেয়। মানুষ যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সিদ্ধান্ত হীনতায় ভোগে। এই সিস্টেম বিভিন্ন মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে মানুষের চাইতে অনেক দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। এর ফলে কাজ অনেক দ্রুত সম্পাদন হয়।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স একটানা ৭ দিন ২৪ ঘন্টা কাজ করার ক্ষমতা রাখে। মানুষ কখনোই ৭ দিন ২৪ ঘন্টা একটানা কোন কাজ করতে পারে না। মানুষের ঘুম এবং বিশ্রামের প্রয়োজন৷ এ আই একটি মেশিন তাই তার কোন বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর বিশাল বড় একটি সুবিধা হচ্ছে এটি এমন কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পারে যা মানুষের পক্ষে করা অত্যন্ত বিপদজনক।

সাধারণ একজন মানুষকে দিয়ে পুনরাবৃত্তি কাজগুলো সর্বোচ্চ উপায়ে করানো সম্ভব হয় না কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর মাধ্যমে পুনরাবৃত্তি কাজগুলো নিখুত ভাবে করা সম্ভব। 

আরো পড়ুনঃ হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল থেকে ঘরে বসেই ইনকাম করুন লক্ষাধিক টাকা

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর অসুবিধা:

এ আই সিস্টেম অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এ আই সিস্টেমের সব সময় লেটেস্ট হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার সহ নিয়মিত আপডেট রাখার জন্য এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ এর জন্য সব সময় মোটা অংকের টাকা খরচ হয়।

এটিতে অনেকের কর্মসংস্থান কমিয়ে দেই। এ আই দিয়ে পুনরাবৃত্তিমূলক কাজ প্রতিস্থাপন করা গেলেও এটি কোম্পানির জন্য উপকারী তবে কর্মসংস্থান কে প্রভাবিত করে। শুধু তথ্য এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দক্ষতার অভাবে তাদের গতানগতিক চাকরিগুলো হারাবে। এবং তারা বেকারত্বের দিকে ধাবিত হবে।

এআই সিস্টেম ব্যবহার করার অন্যতম একটি ঘাটতি হচ্ছে সৃজনশীলতার অভাব। এ আই কখনোই কোন সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করতে পারে না। বিশেষ করে।

আবেগ অনুভূতি অনুপস্থিতি। যদিও এআই সিস্টেম দ্রুত এবং ক্রমাগত উন্নত কাজ করে চলেছে কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আবেগকে কাজে লাগানোর কাজটি করতে পারে না। এটি সত্যিকারের মানুষের সাথে আণবিক সংযোগ তৈরি করতে পারে না।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা,আশা করি আজকের এই পোস্টটি থেকে আপনারা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে সামান্য কিছু ধারণা পেয়েছেন। এই ধরনের ভালো ভালো পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট Lifecyclebd.com এর সাথেই থাকুন। সবাইকে ধন্যবাদ।





Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url