সাইবার অপরাধ কী এবং বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ সম্পর্কে জেনে নিন -
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এই ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে একশ্রেণীর মানুষ বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে, যার মধ্যে সাইবার অপরাধ বা ক্রইম অন্যতম। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে সাথে বাংলাদেশেও এই অপরাধ ব্যপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত ফেসবুক, ইমেইল, টুইটার,ওয়েবসাইট ইত্যাদি ব্যবহার করে এই অপরাধ সংঘটিত হয়। আমাদের সবারই এই অপরাধ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখা উচিত। তাই বন্ধুরা, আজ আমরা আপনাদের জানাবো সাইবার অপরাধ কী এবং বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ সম্পর্কে।
বন্ধুরা বর্তমানে সাইবার অপরাধ একটি ভীতিজনক শব্দে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার না জানলে আপনিও এই অপরাধের কার হতে পারেন। তাই এই অপরাধ সম্পর্কে আমাদের সবারই সচেতন থাকতে হবে। আসুন জেনে নেই সাইবার অপরাধ কী এবং বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ সম্পর্কে -
হ্যাকিং :
হ্যাকিং এবং হ্যাকার শব্দের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত। সাইবার অপরাধ গুলোর মধ্যে হ্যাকিং অন্যতম। সাধারণত ইন্টারনেটের মাধ্যমে কারো তথ্য অনুমতি ব্যতীত নেওয়া এবং তার ক্ষতিসাধন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় হ্যাকিং। আর যারা এই ধরনের কাজের সাথে যুক্ত তাদের বলা হয় হ্যাকার।
বর্তমানে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় ওয়েবসাইট হ্যাকিং, নেটওয়ার্ক হ্যাকিং, ইথিক্যাল হ্যাকিং, পাসওয়ার্ড হ্যাকিং, ইমেইল হ্যাকিং, মোবাইল হ্যাকিং, কম্পিউটার হ্যাকিং।
সাইবার বুলিং :
বুলিং বলতে সাধারণত বোঝায় দুইজন ব্যক্তির মধ্যে তর্ক বা কথা কাটাকাটির জের ধরে একজন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সবার সামনে দোষারোপ বা খারাপ ভাষায় আক্রমণ করা। সাইবার বুলিং হলো অনলাইন টেকনোলজি মাধ্যমে আক্রমণ বা হ্যারাজমেন্ট করা, যা সাধারণত হয়ে থাকে ইমেইল এবং মেসেজ সহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে। সাইবার বুলিং এর ঘটনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতেই বেশি ঘটে।
স্প্যাম :
স্প্যাম হল ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনাকাঙ্খিত, অপাসঙ্গিক বা যুক্তিহীন কোন তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া। এই কাকে বলা হয় স্প্যামিং করা। আর যারা এই কাজগুলো করে থাকে তাদের বলা হয় স্প্যামার। স্প্যামিং অনেকভাবে করা হলেও ই-মেইল স্প্যামিং শব্দটির সাথে বেশিরভাগ মানুষ পরিচিত। এছাড়া মেসেঞ্জার, ফোরাম, সোশ্যাল মিডিয়া ইত্যাদি মাধ্যমে স্প্যামিং করা হয়। এটি একটি বড় ধরনের অপরাধ।
সাইবার এক্সটরশন :
এটি এমন এক প্রকার সাইবার অপরাধ, যা অর্থের চাহিদা বা অন্য কোন প্রতিক্রিয়ার জন্য করা হয়ে থাকে। বর্তমানে সাইবার এক্সটরশন এর মাঝে র্যানসমওয়্যার অন্যতম। র্যানসমওয়্যার হচ্ছে একপ্রকার ক্ষতিকর সফটওয়্যার, যা একটি কম্পিউটারে সংরক্ষিত ডাটা বা তথ্যকে এনক্রিপ্ট করে ফেলে বা বলা যেতে পারে তালা মেরে আটকে দেয়। এতে কম্পিউটারের আসল ব্যবহারকারী নিজে তার কম্পিউটারের কোথাও ঢুকতে পারে না। এখন হ্যাকাররা কম্পিউটারের মালিকে প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য এক ধরনের মুক্তি পণ দাবি করে।
ফিশিং :
ফিশিং হচ্ছে এমন একটি টেকনিক যার মাধ্যমে একজন হ্যাকার খুব সহজেই আপনার জিমেইল, ফেসবুক সহ অন্যান্য আইডি কিংবা পার্সোনাল ইনফরমেশন হ্যাক করতে পারে। এজন্য হ্যাকারদের খুব বেশি হ্যাকিং নলেজের প্রয়োজন হয় না। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শতকরা ৮০% হ্যাক হয় ফিশিং এর মাধ্যমে। এটি কোন হ্যাকিং সিস্টেম না বরং হ্যাকাররা এটাকে একটি স্প্যাম বলে থাকে। একটি হতাশায় কথা হচ্ছে যে, প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন ফিশিং এর ফাঁদে পা দেয়।
ডিডস অ্যাটাক :
ডিডস (ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনাতোকে ডিনায়াল অব সার্ভিস) এমন একটি সাইবার আক্রমণ যেখানে অনলাইনে থাকা একটি ওয়েবসাইটকে ইন্টারনেট ট্রাফিক থেকে বিচ্ছিন্ন করে অফলাইনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। ডিডওএস কে সংক্ষেপে ডিডস বলা হয়ে থাকে। এটি এমন একটি সাইবার এটাক, তার ফলে কোন ওয়েবসাইটকে অ্যাটাক করা হলে সেই সাইটটি যেকোনো ব্যবহারকারীকে অ্যাক্সেস প্রদান করতে বিরত থাকবে। অর্থাৎ ওয়েবসাইটি কিছুতেই ব্রাউজারে লোড হবে না।
আইডেন্টি চুরি :
আজকাল অনলাইনে কেনাকাটা করেন অনেকেই। এজন্য নাম, ঠিকানা, ই-মেইল, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি দিতে হয়। সমস্যাটা সেখানেই। যেসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়, সেখানে এই তথ্যগুলো দিলে তা অপরাধীর কাছে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে অপরাধী আপনার তথ্য ব্যবহার করে আপনার ক্রেডিট কার্ড শূন্য করে দিতে পারে। এটা এক ধরনের সাইবার অপরাধ।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আপনারা সাইবার অপরাধ কি তা বুঝতে পেরেছেন। এই ইন্টারনেটের যুগে আমরা যে কেউ এই সাইবার অপরাধের শিকার হতে পারি। কিন্তু প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার জানলে আমরা অনেকটাই নিরাপদ থাকতে পারবো। সবাইকে ধন্যবাদ।