এই শীতে খেজুরের গুড়ের পুষ্টিগুন ও উপকারিতা জানুন এবং আসল গুড় চিনুন

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমার কাছে শীতের মৌসুম মানেই সুস্বাদু জিভে জল আনা খেজুরের গুড়। এই গুড়ের মিষ্টি গন্ধ আর স্বাদ গুড় প্রেমীদের মন কেড়ে নেয়। আর তাইতো শীতকালে খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পিঠা পায়েস সব গুড় প্রেমীদের কাছে যেন অমৃত। তবে শুধু এই গুড় স্বাদেই সেরা তা কিন্তু নয়। এই গুড়ের রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ, যা আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানিনা। কিন্তু খেজুরের গুড়ের সঠিক পুষ্টিগুণ পেতে হলে আপনাকে কিনতে হবে আসল গুড়। বন্ধুরা, আজ আমরা আপনাদের জানাবো কি কি পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে এই সুস্বাদু খেজুরের গুড়ে এবং নকলের ভিড়ে কিভাবে চিনবেন আসল খেজুরের গুড় -

খেজুরের গুড় পাটারি গুড়

বন্ধুরা, শীতকালে পিঠা পায়েস তৈরিতে ব্যবহৃত হয় খেজুরের গুড়। আর তাই শীত আসতে না আসতেই গুড় প্রেমীরা উৎসুক হয়ে থাকে খেজুরের গুড়ের জন্য। তবে এই গুড় কেবল খেতেই মজাদার নয় বরং স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। আসুন আজ আমরা জেনে নেই খেজুরের গুড়ের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে -

খেজুরের গুড়ের পুষ্টিগুণ :

পুষ্টিবিদরা বলেছেন, চিনির চেয়ে গুড় খাওয়া অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। আর নানা ধরনের গুড়ের মধ্যে খেজুরের গুড়ের পুষ্টি অনেক বেশিই বলা যায়। ১০০ গ্রাম খেজুরের গুড়ে থাকে ১.৫ গ্রাম প্রোটিন, ০.৩ গ্রাম ফ্যাট,  ৮৫.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট এবং ২.৫ গ্রাম ফাইবার। এছাড়া এই গুড়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, জিংক, কপার, ক্লোরাইড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও মিনারেল।

আরো পড়ুনঃ রান্নায় অতিরিক্ত লবণ কমাতে জেনে রাখুন কিছু সহজ টিপস

খেজুরের গুড়ের উপকারিতা :

আয়রনের ঘাটতি মেটায় - খেজুরের গুড়ে রয়েছে পর্যাপ্ত আয়রন, যা আমাদের শরীরের আয়রনের ঘাটতি মেটাতে কার্যকর। তাই অ্যানিমিয়ার রোগীদের জন্য দারুন উপকারী এই গুড়। এছাড়া রক্ত পরিশুদ্ধ রাখতেও সাহায্য করে খেজুরের গুড়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় - খেজুরের গুড়ে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ও মিনারেল রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ইনফেকশন প্রতিরোধ করতেও সাহায্য করে। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বাড়ায় খেজুরের গুড়।

লিভার পরিষ্কার রাখে - খেজুরের গুড় একটি ডিটক্স হিসেবে কাজ করে কারণ এটি শরীর থেকে বাজে টক্সিন বের করে দিয়ে লিভারকে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ খালি পেটে মেথি খাওয়ার উপকারিতা

নারীদের জন্য উপকারী - নারীদের পিরিয়ড সময়কালীন পেট ব্যথা দূর করতে খেজুরের গুড় দুর্দান্ত কাজ করে। এছাড়া খেজুরের গুড়ে থাকা নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান নারীদের বিভিন্ন অসুখ থেকে দূরে রাখে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে -খেজুরের গুড়ে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম থাকে, যা আমাদের রক্তচাপের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তারা নিয়মিত খেজুরপর গুড় খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবো।

ওজন কমায় - খেজুরের গুড় উচ্চ পটাশিয়াম সমৃদ্ধ যা শরীর থেকে পানির ভাব কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ ধনেপাতা বেশি খেলে যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে - খেজুরের গুড়ে রয়েছে পর্যাপ্ত ফাইবার। তাই এটি হজমে সহায়তা করে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এটি আমাদের শরীরের হজম এনজাইম গুলোকে সক্রিয় করে।

ঠান্ডাজনিত এলার্জি ও জ্বর দূর করে - শীতে শরীর গরম রাখতে এবং ঠান্ডাজনিত এলার্জি, সর্দি কাশি ও জ্বর থেকে নিজেকে দূরে রাখতে খেতে পারেন খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড়ে রয়েছে উচ্চমানের ক্যালোরিফিক,যা শরীর উষ্ণ রাখে।

মাইগ্রেনের সমস্যা কমায় - খেজুরের গুড়ে থাকা ঔষধি উপাদান মাইগ্রেনের সমস্যা কমায়। যারা প্রচন্ড মাইগ্রেনের ব্যথায় কষ্ট পান তারা নিয়মিত অল্প করে গুড় খেতে পারেন। এছাড়া এটি সেবনে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।

আরো পড়ুনঃ শীতকালে আপনার ছোট্ট সোনামণির নিন বিশেষ যত্ন

ত্বক ভালো রাখে - খেজুরের গুড়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তাই এটি খেলে সহজে চেহারায় বয়সের ছাপ পরে না। এছাড়া ব্রণ ও ফুসকুড়ি দূর করতেও এই গুড় কার্যকরী।

জেনে নিন আসল গুড় চেনার উপায় :

গুড় কেনার সময় অবশ্যই রং দেখে কিনুন। সাধারণত গুড়ের রং গাঢ় বাদামি হয়। কিন্তু যদি গুড়ের রং হলদেটে হয় তাহলে বুঝতে হবে গুড়ে অতিরিক্ত রাসায়নিক মিশানো আছে।

গুড় কেনার সময় একটু ভেঙে খেয়ে দেখুন। যদি নোনতা স্বাদের হয় তাহলে বুঝবেন এই গুড়ে ভেজাল আছে।

কৃত্রিম চিনি মেশানো গুড় দেখতে খুব চকচকে হয়।

গুড় কেনার সময় গুড়ের ধারটা দুই আঙ্গুল দিয়ে চেপে দেখবেন। যদি নরম লাগে তাহলে বুঝবেন গুড়টি ভালো মানের। আর যদি ধার বেশি শক্ত হয় তাহলে সেই গুড় না কেনাই ভালো।

আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, এখন খেজুরের গুড়ের মৌসুম। অনেকের কাছেই এই গুড় অনেক প্রিয়। তাই এই শীতের সময় মিষ্টি জাতীয় খাবারগুলো বেশি তৈরি হয় খেজুরে গুড় দিয়ে। তবে অবশ্যই গুড় খেতে হবে পরিমিত। কারণ বেশি খেলে ওজন বৃদ্ধি ও রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে পারে। আজ এ পর্যন্তই, সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটার - প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url