জেনে নিন, নবান্ন উৎসব কী এবং এই উৎসব উপলক্ষে বগুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা সম্পর্কে
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজ আমরা আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি একটি ভিন্ন ধর্মী প্রতিবেদন। আজকের এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। আমরা জানি, কৃষি প্রধান আমাদের এই বাংলাদেশ। আর কৃষি প্রধান এদেশে কৃষি সংশ্লিষ্ট অনেক উৎসবের মধ্যে অন্যতম একটি উৎসব হলো নবান্ন। যা বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি উৎসব। নতুন ধানের আগমনে আজও গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হয় এই নবান্ন উৎসব। সাধারণত হেমন্তকালে আমন ধান পাকার পরেই এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। বন্ধুরা, আজ আমরা আপনাদের জানাবো বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব সম্পর্কে এবং এই উৎসব উপলক্ষে বগুড়া জেলার মাছের মেলা সম্পর্কে। আসুন বন্ধুরা আমরা বিস্তারিত দেখে নেই-
বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এর মধ্যে ঐতিহ্যবাহী একটি হল নবান্ন
উৎসব। এটা কৃষকদের আনন্দের উৎসব। বন্ধুরা, নবান্ন উৎসব সম্পর্কে জানতে প্রতিবেদনটি
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
বাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব :
নবান্ন শব্দের অর্থ হল নতুন অন্ন। আর এই নতুন অন্নকে ঘিরেই আয়োজিত হয়
নবান্ন উৎসব অর্থাৎ হেমন্ত ঋতুতে আমন ধান কাটার পর নতুন চাল দিয়ে যে খাবারের আয়োজন
করা হয় সেটাই হলো নবান্ন উৎসব। সাধারণত বাংলার অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম তারিখে এই উৎসব
অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রাম বাংলার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মূলত নবান্ন উৎসব পালন করেন। এই দিন ভোরে তারা নতুন ধানের নতুন চাল ঢেঁকিতে কোটে। এরপর বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ির প্রবীণরা পরলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেন। তারা একটি কলার খোলে গুড় দিয়ে চাল কলা মাখা, নারকেলের নাড়ু, ফল ইত্যাদি কাককে খেতে দেন। কাককে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত এই পর্বটির নাম কাকবলি। তারপর দিনভর চলে বিভিন্ন পদের রান্নাবান্না,যেমন- নতুন চালের ভাত, পিঠা, পায়েস,বিভিন্ন পদের ছোট বড় মাছ, শীতের শাক সবজি দিয়ে তৈরি করেন হরেক রকম তরিতরকারি।
আরো পড়ুনঃ বগুড়া জেলা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সমূহ জানুন।
সব রান্না শেষ হলে তারা একটি কলার পাতায় নতুন চালের ভাত সহ সব রান্না করা পদ বেরে প্রথমে পিতৃপুরুষদের নামে উৎসর্গ করেন। এসব আচার অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ির কেউ অন্ন আহার করেন না। সব রীতি নীতি সম্পন্ন হলে তখন তারা পরিবারের সবাই একসাথে আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত-পরিজন সবাইকে নিয়ে মহা আনন্দে নবান্ন উপলক্ষে রান্না করা বিভিন্ন পদ আহার করেন। আবার সেই রান্না করা সব খাবার কিছুটা আলাদা করে রেখে দেন পরের দিনের জন্য। পরের দিন সকালে সবাই মিলে আবার সেই খাবার আহার করেন। এই রীতিকে বলা হয় বাসি নবান্ন।
নবান্ন উপলক্ষে বগুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা :
নবান্ন উৎসব উপলক্ষে প্রতিবছর বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী গ্রামের
বটতলায় বসে শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। মেলায় বাগার,বোয়াল, রুই, কাতল, চিতল সহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা।
আরো পড়ুনঃ ধনী হতে চাইলে এই ১০ টি উপায় অবলম্বন করুন
উথলী গ্রামের এই মাছের মেলা কাক ডাকা ভোর থেকে হয় সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং দূর দূরান্তের মানুষ আসেন মেলা দেখতে ও মাছ কিনতে। জানা যায়, এই দিন মেলায় প্রায় ১ হাজার মণেরও বেশি মাছ কেনে বেচা হয়। ১ কেজি থেকে শুরু করে ৩৫ কেজি ওজনেরও মাছ পাওয়া যায় এই মেলায়।
তাই মেলা থেকে প্রায় অনেকেই প্রতিযোগিতা করে তুলনামূলক বড় মাছ কিনে নিয়ে
যান। বড় মাছ ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৪০০ টাকা থেকে
৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া ২৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে ব্লাক কার্প, বিগহেড,
সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়।
মাছ ব্যবসায়ীদের থেকে জানা যায়, মেলাটি আগে ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সম্প্রতি তা ব্যাপকতা লাভ করেছে। মেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় শতাধিক মাছের দোকান বসে। এছাড়া মাছের পাশাপাশি শাকসবজি, দই মিষ্টি, মাটির তৈরি তৈজসপত্রের দোকানও বসে মেলায়।
আরো পড়ুনঃ জানেন কি প্রতিদিন বাদাম খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়
আশে পাশের অন্তত ২০ গ্রামের মানুষ আসে এই মেলায়। তাছাড়া মাছের মেলার খবর পেয়ে শহর থেকেও অনেকে আসেন মাছ কিনতে।বছরের এই দিনে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ঘটে। গ্রামের সবখানে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
আরো পড়ুনঃ ২০২৩ সালের মাগুরা জেলার কাত্যায়নী পূজা ও পূজার সময় সূচী-
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, নবান্ন উৎসব
আমাদের বাংলার ঐতিহ্য। বর্তমানে নবান্ন উৎসবের ব্যাপকতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। বন্ধুরা,
তাই আমাদের উচিত বাংলা ও বাঙালির এই লোক ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা। সবাইকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেল রাইটার - প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু