ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান সোনারগাঁও

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের এই বাংলাদেশ অপরূপ সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি। এদেশে রয়েছে গর্ব করার মতো কিছু চমৎকার দর্শনীয় স্থান। যেমন ধরুন, ঢাকার অদূরেই রয়েছে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, যা ছিল প্রাচীন বাংলার রাজধানী। শহরের এই কর্মব্যস্ত কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে একটু রেহাই পেতে ঘুরে আসতেই পারেন সোনারগাঁও থেকে। এখানে অনেক কিছু দেখার আছে, যা আপনাদের মুগ্ধ করবে। তাহলে চলুন বন্ধুরা, ঘুরে আসি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান সোনারগাঁও থেকে -

Sonargaon dhaka

আপনার যদি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য ঘরের বাইরে ছুটে যেতে চান তাহলে যেতে পারেন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান, ঈশা খাঁর স্বপ্নের নগরী সোনারগাঁও। এটা পরিবার পরিজন নিয়ে সময় কাটানোর জন্য দারুন একটি স্থান। আসুন নিচে আমরা দেখে নেই কী কী দেখার আছে এই সোনারগাঁয়ে-

লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর :

বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে সোনারগাঁও লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর অন্যতম। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আবহমান গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ও লোক শিল্পকে ধরে রাখতে ও সর্বজন স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ সোনারগাঁও - এর পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। 

যে পুরনো বাড়িতে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয় তার আদি নাম বড় সর্দার বাড়ি। এখানে জাদুঘর, সেমিনার কক্ষ, লোকজ মঞ্চ ও কারুশিল্প গ্রাম রয়েছে। জাদুঘরে মোট ১১ টি গ্যালারি রয়েছে। গ্যালারি গুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পাট শিল্প ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামে লোক জীবনের পরিবেশ, তামা-কাসা-পিতলের নিদর্শনে লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, লোকজ অলংকার সহ অনেক 

আরো পড়ুনঃ চলুন ঘুরে আসি সিরাজগঞ্জ জেলার ৬টি দর্শনীয় স্থান থেকে

কিছু রয়েছে,যা মুগ্ধ করবে আপনাদের। জাদুঘরে প্রায় সাড়ে চার হাজার নিদর্শন রয়েছে। প্রতিবছর শীতকালে এখানে মাসব্যাপী লোক শিল্প মেলা হয়। এছাড়া জাদুঘরের পশ্চিম প্রান্তে তৈরি করা হয়েছে বিশাল এলাকার জুড়ে কারু শিল্প গ্রাম। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দক্ষ কারু শিল্পীরা বাঁশ-বেত,কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি শাড়ি, নকশি কাঁথা, পাট শিল্প, ঝিনুক, শঙ্খ শিল্প, রেশম শিল্প, একতারা ইত্যাদি উৎপাদন করছেন। এখানে কারুপন্য প্রদর্শন বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি চাইলে আপনার পছন্দের পণ্যটি কিনতে পারবেন।

লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর প্রতি শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার জাদুঘর বন্ধ থাকে। জাদুঘরের ভেতরে প্রবেশ ফ্রি ২ টি ভবনের গ্যালারি সহ ৫০ টাকা।

পানাম নগর :

জাদুঘর থেকে বেরিয়ে ঠিক আধা কিলোমিটার উত্তর দিকে গেলেই আপনার চোখে পড়বে অপূর্ব নির্মানশৈলীতে তৈরি পানাম নগর,যা ঈশা খাঁর সময়কালে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। এই পানাম নগর থেকেই সোনারগাঁয়ের রাজকার্য পরিচালিত হতো। তাঁত ব্যবসায়ীদের মূল কেন্দ্রও ছিল পানাম নগর। বাংলার ঐতিহ্যবাহী মুসলিম কাপড়সহ অন্যান্য তাঁত শিল্পের প্রচার ও প্রসার ঘটে এই পানাম নগর থেকেই। এই নগরের ভেতরে চলে যাওয়া দীর্ঘ সড়কের দুইপাশে হয়েছে লাল ইটে নির্মিত ভাবন,যা অভূতপূর্ব স্থাপত্যশৈলী আর দৃষ্টিনন্দন কারুকার্য নিয়ে আমাদের সংস্কৃতির নিদর্শন হিসেবে সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। 

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান।

এই নগরে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য অট্টালিকা, মসজিদ, মন্দির, মঠ, ঠাকুর ঘর, খাজাঞ্চি খানা, ভোজনালয়, বিচারালয় ইত্যাদি। পানাম নগরীতে দেখা যায়, ৪০০ বছরের পুরনো মঠবাড়ী। এর পশ্চিমে রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কুঠি নীলকুঠি। পানাম নগরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পক্ষীরাজ খাল যা বিভিন্ন রকমের গাছ গাছালি দ্বারা বেষ্টিত। মনোরম লেকে পর্যটকদের নৌকা ভ্রমণ নিয়ে ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিহাস সন্ধানি পর্যটকদের জন্য পানাম নগর একটি দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক স্থান।

বাংলার তাজমহল :

আপনি চাইলে পানাম নগর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বাংলার তাজমহল থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। ২০০৮ সালে ভারতের আগ্রার তাজমহলের আদলে সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পেরার নামক স্থানে আহসনুল্লাহ মনি (চলচ্চিত্র নির্মাতা) বাংলা তাজমহল গড়ে তুলেছেন।তিনি নিজস্ব অর্থে নিজ গ্রামের বাড়িতে ১২ বিঘা জমির উপর তাজমহলটি নির্মাণ করেন।

আরো পড়ুনঃ বগুড়া জেলা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সমূহ জানুন

 তাজমহলের বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে ১৭২ টি বিদেশি ডায়মন্ড পাথর এবং গম্বুজের ওপরে চাঁদ-তারা তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ৪ মন ওজনের ব্রোঞ্জ। রেপ্লিক তাজমহলের সাথে এখানে রয়েছে রেপ্লিক পিরামিড,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর, সিনেমা হল, শুটিং স্পট সহ আরো বেশ কিছু স্থাপনা।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কেমন লাগলো আমাদের আজকের আয়োজন। নিজ পরিবার-পরিজন নিয়ে একদিন ঘুরেই আসুন ঐতিহাসিক স্থান  সোনারগাঁও থেকে। আশা করি সোনারগাঁয়ের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য আপনাদের মুগ্ধ করবে। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url