চলুন ঘুরে আসি সিরাজগঞ্জ জেলার ৬টি দর্শনীয় স্থান থেকে -

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা জানেন কী? বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার মধ্যে প্রাকৃতিক শোভায় সুশোভিত একটি জেলা সিরাজগঞ্জ, যেই জেলাটি তাঁত শিল্পের জন্য বিশ্বের দরবারে পরিচিতি লাভ করেছে। এই জেলা রাজশাহী বিভাগের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা। বঙ্গবন্ধু সেতু এবং সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের অপূর্ব সৌন্দর্য এই জেলাকে পর্যটন সমৃদ্ধ জেলার খ্যাতি এনে দিয়েছে। বন্ধুরা, বুঝতেই পারছেন আমাদের আজকের আলোচনায় থাকছে সিরাজগঞ্জ জেলা। এই জেলায় রয়েছে বহু দৃষ্টিনন্দন স্থান যা আজকে আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন দেখে নেই কি কি দর্শনীয় স্থান আছে এই সিরাজগঞ্জ জেলায় -

sirajgonj district

সিরাজগঞ্জ উত্তরবঙ্গের তৃতীয় সর্বোচ্চ উন্নত জেলা এবং ৯ টি উপজেলার সমন্বয়ে প্রশাসনিক অঞ্চল বিস্তৃত এই জেলার। এই জেলার আয়তন প্রায় ২৪৯৭.৯২ বর্গ কিলোমিটার। যমুনা নদী বিধৌত এই জেলার ভৌগোলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতি অঙ্গন বৈচিত্র্যময়। আজ আমরা জেনে নেব সিরাজগঞ্জ জেলার ৬টি দর্শনীয় স্থানগুলোর কিছু জানা-অজানা তথ্য। আসুন তাহলে ঘুরে আসি সিরাজগঞ্জ জেলার ৬টি দর্শনীয় স্থান থেকে –

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের সেরা ১০টি দর্শনীয় স্থান।

নবরত্ন মন্দির :

সিরাজগঞ্জ জেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত নবরত্ন মন্দির এই জেলার একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান,যা প্রায় ১৭ শতকের একটি প্রত্নতন্ত্র নিদর্শন। বাংলাদেশে আবিষ্কৃত নবরত্ন মন্দির সমূহের মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। হুবহু কান্তজি মন্দিরের মতো দেখতে এই মন্দিরটি টেরাকোটার টাইলস দিয়ে ৯ স্তর বিশিষ্ট ছাদের জন্য বিখ্যাত। এখানে গেলে ইতিহাসের পথ ধরে আপনিও হারিয়ে যেতে পারেন কিছু সময়ের জন্য মধ্যযুগে।এই মন্দিরে আছে কারুকার্যময় একটি শিব মন্দির ও একটি পূজা অর্চনার চন্ডী মন্দির। সম্ভবত ১৬৬৪ সালের রামনাথ ভাদুরী নামে স্থানীয় এক জমিদার এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে কেউ কেউ মনে করেন, বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খানের সময়কাল ১৭০০-১৭২৮ সালের মধ্যে কোন এক সময় নির্মাণ করা হয়েছিল।

চলন বিল :

সিরাজগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে চলন বিল অন্যতম। চলন বিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দিন এবং সমৃদ্ধতম জলাভূমি গুলোর একটি। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলা দুটির অধিকাংশ স্থান জুড়ে অবস্থিত চলন বিল। বর্ষাকালে এই বিলের আসল সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। এই সময় প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা একটি জলরাশিতে পরিণত হয় এবং এই সৌন্দর্য দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসি।

আরো পড়ুনঃ বগুড়া জেলা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সমূহ জানুন।

চায়না বাঁধ:

সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড যমুনা নদীর কুল ঘিরে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। দুই পাশে নদী আর মাঝখানে সবুজ ঘাসের গালিচায় বসে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে সিরাজগঞ্জের  চায়না বাঁধের বিকল্প নেই। এই সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রায় প্রতিদিনই অনেক দর্শনার্থী এখানে ঘুরতে আসে। বিশেষ করে বর্ষাকালে চায়না বাঁধের সৌন্দর্য হয়ে যায় যেন দ্বিগুণ। চায়না বাঁধ ক্রসবার ৩ নামেও পরিচিত।

রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি :

রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত। এটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈত্রিক জমিদার বাড়ি। ১৮৪২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের কাছ থেকে নিলামে ১৩ টাকা ১০ আনা দিয়ে বাড়িটি কিনে নেন। ১৮৮৯ সালের রবি ঠাকুর প্রথম এই কুটি বাড়িতে আগমন করেন এবং কিছুকাল তার কর্মবহুল জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি ৭ বছর এই জমিদার বাড়িতে অবস্থান করেন। এই সময় গুলিতে তিনি বিভিন্ন সাহিত্যকর্ম রচনা করেন, যেমন - চিত্রা, সোনার তরী, চৈতালি, বিসর্জন, বৈষ্ণব কবিতা, দুই পাখি, আকাশের চাঁদ, যমুনা, হৃদয় ইত্যাদি। নোবেল পাওয়া গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের কাজও তিনি এখানেই শুরু করেন। প্রায় দশ বিঘা জমির রবীন্দ্র কাছারি বাড়িটিকে বর্তমানে রবীন্দ্র জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন ছবি, ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে। সাহিত্য প্রেমিদের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন অতিরিক্ত ওজন কমানোর সহজ কিছু উপায়

বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু :

বাংলাদেশের ৩ টি বড় নদীর মধ্যে সবচেয়ে বৃহত্তম এবং পানি নির্গমনের দিক থেকে বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম নদী যমুনার ওপর নির্মিত  হয়েছে বঙ্গবন্ধু যমুনা সড়ক ও রেল সেতু। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট এই সেতুটি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সেতু এবং বিশ্বের ১১ তম দীর্ঘ সেতু। ১৯৯৮ সালের জুন মাসে এটি উদ্বোধন করা হয়। এই সেতু যমুনা নদীর পূর্ব তীরের ভুয়াপুর এবং পশ্চিম তীরের সিরাজগঞ্জকে সংযুক্ত করেছে। বাংলাদেশের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে একটি কৌশলগত সংযোগ প্রতিষ্ঠা করেছে।

হার্ড পয়েন্ট :

সিরাজগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে হার্ড পয়েন্ট একটি পর্যটন স্থান হিসেবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। এটি সিরাজগঞ্জ জেলার যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। বর্ষার মৌসুমে এই স্থানটি খুবই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এখানে দাঁড়ালে যমুনা নদীর পূর্ণরূপ পর্যবেক্ষণ করা যায়। তাই এই সময় সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর হার্ড পয়েন্টে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ২০২৩ সালের দুর্গাপূজার সময় সূচী ও বিভিন্ন তথ্য

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কেমন লাগলো আমাদের আজকে আর্টিকেলটি। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবার সুস্থতা কামনা করে আজকের মত শেষ করছি, সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটার - প্রিয়ন্তি কুণ্ডু

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url