পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পেতে জেনে নিতে পারো - রচনা : শীতকাল / শীতের সকাল /আমার প্রিয় ঋতু।

প্রিয় পাঠক শিক্ষার্থী বন্ধুরা, কেমন আছো তোমরা সবাই? আমাদের আজকের আর্টিকেলটি তোমাদের জন্য। কেননা আজ আমরা নিয়ে এসেছি তোমাদের জন্য একটি সুন্দর রচনা, যা তোমাদের বিভিন্ন পরীক্ষায় সচরাচর এসে থাকে। আর সেটা হল শীতকাল বা শীতের সকাল অথবা আমার প্রিয় ঋতু। এই সুন্দর রচনাটি আমরা বিভিন্ন বই থেকে পয়েন্ট সংগ্রহ করে তোমাদের জন্য সহজ ভাষায় লেখার চেষ্টা করেছি। আশা করি তোমাদের মুখস্ত করতে কোন অসুবিধা হবে না। চলো দেখে নেওয়া যাক রচনাটি -

winter morning pic

রচনা : শীতকাল / শীতের সকাল / আমার প্রিয় ঋতু

ভূমিকা :

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ হলো ঋতু বৈচিত্রের মেলা। আর এই ঋতু বৈচিত্র্যের পট পরিবর্তন প্রকৃতির যেন এক অপরূপ খেলা। কবির ভাষায় - 

ঋতুর দল নাচিয়া চলে

ভরিয়া ডালি ফুল ও ফলে,

নিত্যলোকে চরণতলে মুক্তি পায় ধরা

ছন্দে মেতে যৌবনেতে রাঙ্গিয়া উঠে জরা।

এমনই এক ধারাবাহিকতায় হেমন্তের পর প্রকৃতিকে কুয়াশার চাদরে জড়িয়ে দিতে আবির্ভাব ঘটে শীতের। শীত এদেশে আসে রিক্ততার রূপ ধারণ করে। বন বনানীর পাতা ঝরার বার্তা বয়ে আনে শীতকাল।

আরো পড়ুনঃ শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষে আমাদের প্রিয় “শেখ রাসেল” রচনা

শীতের আগমন :

ষর ঋতুর এদেশে শীতকাল আসে ভিন্ন সাজে। কনকন ঠান্ডা, উত্তরের হিমেল হাওয়া, কুয়াশা আর পাতা ঝরার নিয়মে শীতের আগমন ঘটে। সাধারণত পৌষ ও মাঘ এই দুই মাস শীতকাল হলেও অনেক সময় অগ্রহায়ণ মাস থেকেই শুরু হয় শীতের ঠান্ডা বাতাস। তবে পৌষ ও মাঘ মাসে শীতের তীব্রতা এত বেড়ে যায় যে তা দেখে কবি বলেছেন -

 হিম হিম শীত শীত

 শীত বুড়ি এলোরে

 কনকনে ঠান্ডায়

 দম বুঝি গেল রে।

শীতকালে প্রকৃতির রূপ :

শীতকালে প্রকৃতি বেশিরভাগ সময়ই ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকি। কোন কোন দিন সূর্যের মুখ পর্যন্ত দেখা যায় না। তাই এই সময় এক ফালি রোদ সকলের কাছে বহু প্রতীক্ষিত হয়ে ওঠে। শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে চারিদিকে তাকালে  মনে হয় প্রকৃতি যেন কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে। শীত যেন সমস্ত প্রকৃতিকে রিক্ত করে দিয়েছে। এই সময় অধিকাংশ গাছের পাতা রুক্ষ ও বিবর্ণ হয়ে ঝরে পরে। শীতকালে রাত বড় আর দিন ছোট হয়।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস ১৫ ই আগস্ট -রচনা

নগর জীবনে শীতকাল :

যান্ত্রিক ব্যস্ত নগরে শীতকাল একটু ভিন্ন। নগর জীবনে সাধারণত শীতকে উপভোগ করার সুযোগ কম। এখানে উঁচু তলার মানুষেরা গরম কম্বল জড়িয়ে ঘুমিয়ে কাটায় শীতের প্রভাব। ফলে তাদের পক্ষে সকালের কুয়াশা আচ্ছন্ন সুন্দর রূপ অবলোকন সম্ভব হয় না। অন্যদিকে, চাকরিজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষ কুয়াশা ভেদ করে ছুটে চলে নিজ নিজ গন্তব্যে। জীবনের ব্যস্ততা চোখে পরে নিয়ত। শহরে দেখা যায় বারান্দায় বসে রোদ পোহানোর দৃশ্য কিংবা গরম চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে খবরে কাগজ পড়ার দৃশ্য। এখানে শিশিরে পা ভেজে  না, পিঠার গন্ধে বাতাস ব্যতিক্রম হয়ে ওঠে না। নগরবাসীরা বাঁধা থাকে ব্যস্ততার বেড়াজালে।

গ্রামীণ জীবনে শীতকাল :

শীতকালের প্রকৃত আনন্দ গ্রামীণ জীবনেই খুঁজে পাওয়া যায়।  বাংলার গ্রাম গুলোতে শীতের সকাল বেশ মনোরম হয়। সকালের প্রথম রোদে জ্বলন্ত উনুনের পাশে বসে  গরম ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা আর খেজুরের রস শীতের সকালে এনে দেয় এক অন্যরকম মাত্রা। শীতের কুয়াশা ভেদ করে নিজ নিজ গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বের হয় গ্রামের কর্মঠ মানুষেরা।  সূর্যের দেখা পাওয়া মাত্রই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা রোদ পোহাতে শুরু করে। গ্রামের মানুষেরা খরকুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে শীতকালে উষ্ণতা খুঁজে ফিরে। আগুনের চারপাশে বসে তারা তাপ পোহাতে থাকে। তবে গ্রামীণ জীবনে দরিদ্রদের শীতকালে কষ্টের সীমা থাকেনা। শীত বস্ত্রের অভাবে তাদের অনেক কষ্ট পেতে হয়।

শীতকালীন পিঠা :

পিঠা পার্বণের ঋতু হিসেবে বিশেষ খ্যাতি রয়েছে শীতকালের। শীতের সকাল যেন পিঠা তৈরির আদর্শ সময়। গ্রাম বাংলার বধূরা তাই শীত উপেক্ষা করে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পিঠা তৈরিতে। শীতের পিঠার মধ্যে আগেই আসে ভাপা পিঠার নাম। এছাড়াও আরো অনেক সুস্বাদু পিঠা তৈরি হয় শীতকালে, যেমন - চিতই পিঠা, দুধ চিতই, দুধপুলি, ক্ষীর পিঠা, পাটিসাপটা, নকশী পিঠা ও পাকন পিঠা ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ লোককাহিনী - বেহুলা ও লক্ষিন্দরের বাসর ঘর

শীতকালীন শাকসবজি ও ফুল-ফল :

শীতকালে সবজি চাষ হয় প্রচুর। এই সময় বিভিন্ন ধরনের সবজি আমরা বাজারে দেখতে পাই। শিম,মটরশুঁটির, টমেটো, গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বিট, পালং শাক ইত্যাদি শাকসবজি সমাহার ঘটে শীতকালে। কমলালেবু, নাশপাতি এই ঋতুর প্রধান ফল। এই সময় নানা ধরনের ফুল ফোটে, যেমন - গাঁদা, সূর্যমুখী, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ ইত্যাদি। শীতকালে খেজুরের রস খুব ভালো পাওয়া যায়।

শীতকালীন সময়ে ভ্রমণ :

শীত মানে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে ব্যাগ গুছিয়ে, ভ্রমণের জন্য বেরিয়ে পড়া। শীতকালের শুষ্ক এবং সতেজ প্রকৃতি ভ্রমণ পিপাসা বাড়িয়ে দেয়। দেশীয় পর্যটক ছাড়াও এ সময় দেশে প্রচুর বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। কক্সবাজার, টেকনাফ, সুন্দরবন, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কুয়াকাটা প্রভৃতি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত জায়গা সমূহ বরাবরই পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে থাকে। শীতকালীন সময়ে ভ্রমণ আরামদায়ক ও আনন্দময়।

শীতকালীন অসুবিধা :

শীতকাল ধনী ব্যক্তিদের জন্য আরামদায়ক হলেও শীতের সময় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় দরিদ্র জনগোষ্ঠী। দরিদ্র  জনগোষ্ঠীর কাছে শীত মানে গরম কাপড়ের অভাব আর ঠান্ডা জনিত রোগের সাথে লড়াই করা।  গৃহহীন মানুষদের এই সময় শীতের তীব্রতা কে সাথে নিয়ে মানবতার জীবনযাপন করতে হয়। প্রচন্ড ঠান্ডায় মৃত্যুর খবর প্রায়ই খবরের কাগজে উঁকি দেয়। শীতকালে অনেক জমিতে চাষাবাদ সম্ভব হয়না। ফলে কৃষকদের অনাহারে দিন কাটাতে হয়। এই সময় অনেক গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে মারা যায়।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন ২০২৩ সালের দুর্গাপূজার সময় সূচী ও বিভিন্ন তথ্য

উপসংহার :

শীতকাল অন্য সব ঋতুর চেয়ে একদম আলাদা। শীতের রিক্ততা প্রকৃতির সবুজকে ছিনিয়ে নিলেও দিয়ে যায় ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা। নানা অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও শীতকাল প্রায় সবারই প্রিয়। চিরায়ত বাংলার পিঠা-পায়েস, মেলা-পার্বণ সহ নানা ঐতিহ্য ধারণ করে এই শীতকাল।

প্রিয় পাঠক শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আশা করি আমাদের আজকের আয়োজন তোমাদের ভালো লেগেছে। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে এ ধরনের সহজ ও সুন্দর রচনা তোমাদের মুখস্ত করে রাখা প্রয়োজন। তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি। সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটার- প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url