গ্রিন টির উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জানুন
পানিয় হিসেবে চা ও কফির পরে সারা বিশ্ব জুড়েই রয়েছে গ্রিন টির কদর। কেননা গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট , যা সবদিক থেকে শরীর চাঙ্গা রাখে।
গ্রিন টিতে থাকা বিভিন্ন উপাদান :
গ্রিন টি তৈরি হয় ক্যামেলিয়া সাইনেন্সিস গাছের পাতা থেকে। ১ কাপ গ্রিন টির মধ্যে থাকে -২.৫ ভাগ ক্যালোরি, ০.৫ গ্রাম প্রোটিন, ২০ মিলি গ্রাম পটাশিয়াম, ২.৫ মিলি গ্রাম সোডিয়াম, ২৯.৫ মিলি গ্রাম ক্যাফাইন। এছাড়াও থাকে কিছু ফাইটোকেমিক্যাল,যেমন - ফ্ল্যাভোনস্ল,কটেচিনস,থেআফ্লাভিনস ইত্যাদি
আরো পড়ুনঃ রূপচর্চায় ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল
গ্রিন টির উপকারিতা :
গ্রিন টি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারি একথা আমরা কমবেশি সবাই জানি কিন্তু গ্রিন টি আমাদের কি কি উপকার করে থাকে তা আমরা অনেকেই জনি না। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রিন টির উপকারিতা -
হৃদরোগের ঝুকি কমায় :
হৃদরোগের ঝুকি কমানোর ক্ষেত্রে গ্রিন টি খুবই কার্যকরী। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, গ্রিন টি রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখে :
গ্রিন টিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইটোকেমিক্যালস থাকে যা আমাদের শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমানও বাড়ায়।
ওজন কমায় :
গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে আমাদের শরীরের মেটাবলিক রেট বৃদ্ধি পায়। যা আমাদের শরীরের মেদ জমতে দেয় না। এছাড়া এতে থাকা কেটাচিনও পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি একদিনে ৭০ ক্যালোরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে বছরে ৭ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে :
গ্রিন টি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গ্রিন টি প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য করে। তাই এটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকরী।
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় :
গ্রিন টি মস্তিষ্কের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এতে প্রচুর পরিমাণ ক্যাফাইন থাকে এবং বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, ক্যাফাইন আমাদের মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
ডিপ্রেশন দূর করে :
ডিপ্রেশন বা অবসাদ দূর করতে গ্রিন টি খুবই কার্যকরী। এতে 'থিয়ানিন' নামের অ্যামাইনো এসিড থাকে। এই উপাদান অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। তাই অবসাদ দূর করতে নিয়মিত গ্রিন টি পান করুন।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন রসুনের পুষ্টিগুণ , উপকারিতা ও অপকারিতা
এনার্জি বা শক্তি বাড়ায় :
গ্রিন টিতে অনেক ফাইটোকেমিক্যালস থাকে, যা আমাদের শরীরের এনার্জি বাড়িয়ে তোলে এবং যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে আমাদের মনোযোগ আরো বেশি দৃঢ় হয়।আমাদের আলস্য ভাব ও মনোযোগের অভাব দূর করে।
দাঁত ভালো রাখে :
গ্রিন টিতে থাকা ফ্যাটেকাইন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই উপাদানটি মুখের ভেতরে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিকে রোধ করে। ফলে এটা গলার বিভিন্ন সংক্রমণ রোধ করা সহ দাঁত ভালো রাখতে সহায়তা করে।
স্কিন ক্যান্সার রোধ করে :
গ্রিনটিতে থাকে কিছু পলিফেনাল যা আমাদের স্কিন বা ত্বককে সূর্যের প্রখর রশ্মি এবং UVB রেডিয়েশন থেকে রক্ষা করে। ফলে আমাদের ত্বকে বিভিন্ন রোগ এবং ক্যান্সার হবার প্রবণতা কমে যায়।
গ্রিন টির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া :
গ্রিন টি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি, তবে এটা বেশি পান করা ভালো নয়। কেননা এরো কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে, যা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর । চলুন তাহলে জেনে নেই গ্রিন টির পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি কি -
১.গর্ভাবস্থায় প্রচুর পরিমাণে গ্রিন টি পান করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া বাচ্চার জন্মগত ত্রুটিও হতে পারে। তাই গর্ভবতী ও বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানো নারীদের গ্রিন টি পান করার পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
২.দিনে ১ থেকে ২ কাপের বেশি গ্রিন টি পান করা উচিত না। কারণ এতে বেশি পরিমাণ ক্যাফাইন থাকে,যা খুব অল্প পরিমাণ আমাদের শরীরের জন্য ভালো। তাই বেশি গ্রিন টি গ্রহণ করলে আমাদের মাথাব্যথা ও বমি বমি ভাব হতে পারে।
৩.খালি পেটে গ্রিন টি পান করা একদম উচিত না। কারণ শরীরে এসিডের পরিমাণ বাড়তে পারে এবং আমাদের হজমের সমস্যা হতে পারে।
৪.গ্রিন টির নির্যাসে রয়েছে উচ্চ ঘনত্ব।তাই বেশি পরিমাণ গ্রিন টি পান করলে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৫.রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কখনোই গ্রিন টি পান করবেন না। এতে আপনাকে অনিদ্রায় ভুক্তে হতে পারে।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, গ্রিন টি আমাদের জন্য একটি উপকারি পানীয়। তবে এটা সঠিক সময় ও নিয়ম মেনে পান করতে হবে। তাহলেই অপকারের থেকে উপকারি বেশি পাওয়া যাবে। আজকে আর্টিকেলটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাইকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেল রাইটার -প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু