আসুন জেনে নেই ভূমিকম্প কি? কেন হয় এই ভূমিকম্প? ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়ই বা কি কি?

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমাদের আজকের আলোচনা সভায় আপনাদের সবাইকে স্বাগতম। আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো ' ভূমিকম্প '। ভূমিকম্প শব্দটির সাথে আমরা ছোট বড় সবাই বেশ ভালোভাবে পরিচিত। পৃথিবীতে যত ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে তার মধ্যে ভূমিকম্প উল্লেখযোগ্য। কেননা বিজ্ঞানীদের মতে, গত ৪০০০ বছরে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলায় পৃথিবীর প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ লোক মারা গেছে। তাই ভূমিকম্প কি, কেন হয় এই ভূমিকম্প এবং ভূমিকম্পের সময় আমাদের করণীয়ই বা কি - এগুলো আমাদের জেনে রাখা খুব  জরুরী। আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের ভূমিকম্প সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক -

wave

ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া গেলেও ভূমিকম্পের তেমন কোন পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। আর এ কারণেই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে। আসুন বন্ধুরা আজ আমরা জেনে নেই ভূমিকম্প কি, ভূমিকম্পের কারণ ও ভূমিকম্পের সময় আমাদের কি করা উচিত -

ভূমিকম্প কি :

সাধারণভাবে বলতে গেলে ভূমিকম্প হল ভূ-গর্ভের আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পন। অর্থাৎ ভূ-গর্ভে অবস্থিত প্লেটের ব্যাপক সংঘর্ষের মাধ্যমে সৃষ্ট কম্পনই হল ভূমিকম্প। ভূমিকম্প সাধারণত কয়েক সেকেন্ডে থেকে ১-২ মিনিট স্থায়ী হয়। তবে কিছু কিছু ভূমিকম্প ৮-১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

আরো পড়ুনঃ ফাইভার কি ? ফাইভার থেকে সত্যিই কি ইনকাম করা যায়।

ভূমিকম্পের ধরন :

সারা পৃথিবীতে বছরের গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার ভূমিকম্প বার হয়। এদের বেশিরভাগ ভূমিকম্প মৃদু হয়ে থাকে, যেগুলো আমরা তেমন অনুভব করতে পারিনা। তবে ভূমিকম্প সাধারণত ৩ ধরনের হয়। এগুলো হলো -

১. অগভীর ভূমিকম্প - ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে যে ভূকম্প সৃষ্টি হয় তাকে অগভীর ভূমিকম্প বলে।

২. মধ্যবর্তী ভূমিকম্প - ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ভূ-পৃষ্ঠের ৭০ কিলোমিটার নিচ থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে যে ভূকম্পের সৃষ্টি হয় তাকে মধ্যবর্তী ভূমিকম্প বলে।

৩. গভীর ভূমিকম্প - ৩০০ কিলোমিটারের নিচে হলে তাকে গভীর ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

ভূমিকম্প পরিমাপ যন্ত্র :

রিখটার স্কেল দ্বারা ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। ১৯৩৫ সালে চার্লস রিখটার এই যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন এবং তার নাম অনুসারেই যন্ত্রটির নামকরণ করা হয় রিখটার স্কেল।

রিখটার স্কেলে এককের সীমা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। এই স্কেলে মাত্র ৫ এর বেশি হওয়া মানেই ভয়াবহ দুর্যোগের আশঙ্কা। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের মাত্রা নিম্নরূপ -

৫ - ৫.৯৯ মাঝারি

৬ - ৬.৯৯ তীব্র

৭ - ৭.৯৯ ভয়াবহ

৮ - এর উপর অত্যন্ত ভয়াবহ 

আরো পড়ুনঃ বগুড়া জেলা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সমূহ জানুন।

ভূমিকম্পের কারণ :

ভয়াবহ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম হল ভূমিকম্প। কেননা রিখটার স্কেলের ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প একটি দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধান কালে লক্ষ্য করেন যেযেসব এলাকায় পর্বতমালার বেশি অবস্থিত সেসব এলাকায় ভূকম্পন বেশি হয়। পৃথিবীর ভূ-ত্বক ৮ টি বড় বড় টুকরা এবং ৬ টি আঞ্চলিক টুকরা দ্বারা বিভক্ত। এগুলো টেকটনিক প্লেট নামে পরিচিত। আর এই প্লেটগুলো বিভিন্ন রকমের স্থানান্তর বা বিচ্যুতি ভূমিকম্পের অন্যতম কারণ। এছাড়াও ভূমিকম্পের আরো অন্যান্য কারণ রয়েছে। এগুলো হলো -

১. কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

২. ভূ-ত্বক তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হয়ে পড়লে ফাটল ও ভাজে সৃষ্টি হয় এবং তখন ভূমিকম্প হয়।

৩. অনেক সময় ভূ-গর্ভের মধ্যে সঞ্চিত বাষ্প পুঞ্জের পরিমাণ অত্যাধিক হয়ে যায়, তখন তা প্রবল বেগে শিলাস্তরে ধাক্কা দেন এবং তখন ভূমিকম্প অনুভব হয়।

৪. ভূ-ত্বকের কোন স্থানে ভূ-আলোড়নের ফলে শিলা ধসে পড়ে বা শিলাচ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প হয়।

আরো পড়ুনঃ অমনোযোগী বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করে তোলার কিছু উপায় জেনে নিন

৫. মাঝে মাঝে পার্বত্য অঞ্চল গুলোতে যখন ধ্বস নামে তখন বিশাল পাথরের স্তুপ প্রবল বেগে নিচে পতিত হয় তখন তার প্রভাবে ভূমিকম্প অনুভব হয়।

৬. ভূ-গর্ভে হঠাৎ চাপের বৃদ্ধি বা হ্রাস হলে অনেক সময় তার প্রভাবেও ভূমিকম্প হয়।

৭. হঠাৎ করে হিমবাহ পর্বতগাত্র থেকে নিচে পতিত হলে ভূ-পৃষ্ঠ কেঁপে ওঠে এবং ভূমিকম্প হয়।

৮. বর্তমান সময়ে বিভিন্ন দেশ গুলো প্রায় ভূ-গর্ভে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে থাকে। যার ফলে সেই বিস্ফোরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে তীব্র ভূমিকম্প অনুভব হয়।

ভূমিকম্পের সময় আমাদের করনীয় :

১. ভূমিকম্প অনুভাব করলে শান্ত থাকুন ৷ ভবনের নিচে থাকলে দ্রুত বাহিরে চলে যান ৷

২.গাড়িতে থাকলে দ্রুত ফাঁকা মাঠে অবস্থান নিন।

৩.ওভারব্রিজে ও ফলাইওভারে থাকলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করুন ৷

 ৪.কোনো প্রকার ভবনে আটকে পড়লে ফোন ব্যবহার করে উদ্ধার কারীকে জানান ৷

৫. রান্না ঘরে থাকলে দ্রুত গ্যাসের চুলা ও বিদ্যুতের মেন লাইন বন্ধ করুন ৷

৬.কোনো প্রকার দোয়ালে নিচে আটকে পড়লে নাড়াচাড়া না করে মুখে রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখুন এবং উদ্ধার কারীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করুন ৷

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন খালি পেটে মেথি খাওয়ার উপকারিতা 

৭. উঁচু বাড়ির ছাদ , জানালা থেকে লাফ দোয়ার চেষ্টা করবেন না ৷

৮.ভূমিকম্পের সময় লিফট ব্যাবহার না করাই ভালো ৷

৯.ভবনের উপর তালায় থাকলে নিরাপদে ছাদে উঠে যান ৷

১০.নতুন জায়গায় পথ না চিনলে খোলামাঠে অবস্থান করবেন ৷

১১.কোথাও যদি ভবন হেলে বা ভেঙ্গে যায় , তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য নিয়ে উদ্ধার করতে হবে এবং ফায়ার সার্ভিসকে ঢাক দিতে হবে ৷

১২. সর্বোপরি আতঙ্কে সৃষ্টি করবেন না।

প্রিয় পাঠ্য বন্ধুরা, ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ৷ আর এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে অমাদের সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে, ভয় পেলে চলবে না। বন্ধুরা আপনারা সবাই সুস্থ থাকুন, নিরাপদে থাকুন এই কামনায় আজকের মত শেষ করছি । সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটার - অনির্বাণ কুণ্ডু


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url