এই গরমে পোকামাকড়ের উপদ্রব কমাতে জেনে নিন কিছু ঘরোয়া টিপস।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আমি তেমন ভালো নেই। কেননা এই গরমে জীবন এমনিতেই অতিষ্ঠ, তার ওপর আবার পোকামাকড়ের উপদ্রব যেন অসহনীয় হয়ে উঠেছে। শীতকালে পোকামাকড় তেমন চোখে পড়ে না কিন্তু গরমকালে বিশেষ করে বৃষ্টির দিনগুলোতে পোকামাকড় যেন আমাদের অতিষ্ঠ করে তোলে। মশা, মাছি, তেলাপোকা, টিকটিকি, ছারপোকা, উইপোকা, বিছা, কেল্লা, ইঁদুর ইত্যাদি পোকামাকড় গরমকালে বেশি দেখা যায় ঘরের বিভিন্ন কোনায় কোনায়, আসবার পত্রের ফাঁকে অথবা বসত বাড়ির আনাচে কানাচে।
বন্ধুরা, আমার মত আপনাদের যাতে পোকামাকড়ের উপদ্রব সহ্য করতে না হয় সেজন্য
আজ আমি নিয়ে এসেছি আপনাদের জন্য পোকামাকড়ের হাত থেকে মুক্তির কিছু ঘরোয়া উপায়। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক -
ভিনেগার :
ভিনিগার মোটামুটি আমাদের সবাই ঘরেই থাকে। আর এই ভিনেগার দিয়েই পোকামাকড়ের
উপদ্রব কমানো সম্ভব। ভিনেগারের টক গন্ধ পোকামাকড়ের কাছে বিষের মত। তাই সমপরিমাণ ভিনেগার
ও পানি একসাথে মিশিয়ে একটি স্প্রে বোতলে ভরে মিশ্রণটি ঘরের আনাচে কানাচে স্প্রে করলেই
পোকামাকড় আপনার ঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।
আরো পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার উপায় ২০২৩
পেপারমেন্ট অয়েল :
মশা, মাছি, পিঁপড়া,মাকড়সা ও অন্যান্য
পোকামাকড়ের উৎপাত থেকে রেহাই পেতে ব্যবহার করুন পেপারমেন্ট অয়েল। এর গন্ধে বাড়ি
থেকে ইঁদুরও পালিয়ে যায়। এজন্য আপনাকে পেপারমেন্ট অয়েল তুলার সাথে ভালোভাবে লাগিয়ে
ঘরের বিভিন্ন স্থানে রেখে দিতে হবে। এছাড়া কয়েক ফোটা পেপারমেন্ট অয়েল এক কাপ পানির
সাথে মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ঘরের আনাচে কানাচে স্প্রে করলে যেকোনো পোকামাকড়ের উপদ্রব
কমে যাবে। পোকামাকড় তাড়াতে ভিনেগার ও পেপারমেন্ট অয়েলও একসাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা
যেতে পারে।
ব্লিচিং পাউডার :
ব্লিচিং পাউডার পোকামাকড়ের যম। তবে এটা ঘরের ভেতরে ব্যবহার না করে বসতবাড়ি
আনাচে-কানাচে ছিটিয়ে দিতে হবে। এতে বিছা, কেল্লা, পিঁপড়া ও আরো বিভিন্ন পোকামাকড়ের
বংশ হবে নির্বংশ।
ন্যাপথলিন :
আলমারিতে বা কাপড় রাখার যেকোন স্থানে ন্যাপথলিন রেখে দিলে কাপড়চোপড়ে
পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারবেনা। এছাড়া রান্নাঘরের বেসিনে, টয়লেটে, ঘরের কোনায় ন্যাপথলিন
রেখে দিলে অনেক ধরনের পোকামাকড় বা জীবাণুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং এটা দুর্গন্ধও
দূর করে।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন গ্রিন টির উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
কেরোসিন তেল :
উইপোকা, পিঁপড়া, ছারপোকা এদের হাত থেকে বাঁচতে কেরোসিন তেল কার্যকরী। গরম
পানিতে সাবান ও কেরোসিন তেল মিশিয়ে খাটের নিচে, ঘরবাড়ি চারদিকে স্প্রে করুন এবং তারপর
দেখুন কেরোসিন তেলের কেরামতি।
নিম পাতা :
ঘর থেকে পোকামাকড় দূর করতে নিম পাতার আছে বিশেষ ক্ষমতা। নিম পাতা শুকিয়ে
ঘরের কোনায় কোনায়, আলমারিতে, বিছানার তোশকের নিচে,চালের ড্রামে রাখুন এবং দেখুন নিম
পাতার জাদুকরি গুণ। আপনার ঘর থেকে উধাও হবে পোকামাকড়।
পুদিনা পাতা :
পুদিনা পাতা আমরা কমবেশি সবাই চিনে। এই পুদিনা পাতা নিম পাতার মতোই পোকামাকড়
দমনের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। কিছু পরিমাণ পুদিনা পাতা কুচি করে বিছানার চারপাশে,
ঘরের কোনায় কোনায় ছিটিয়ে দিন। এছাড়া আলমারির কাপড়ের ভাঁজে পুদিনা পাতা রাখলে পোকার
আক্রমন কমবে এবং সাথে পাবেন কাপড়ে সুন্দর গন্ধ। পুদিনা পাতা ইঁদুরের উপদ্রব কমাতে
সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ দাঁত সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য
দারচিনি ও লবঙ্গ :
দারচিনি ও লবঙ্গ মূলত তেলাপোকা তাড়ানোর মহা ঔষধ। দারচিনি ও লবঙ্গ গুড়া
করে ঘরের যেসব জায়গায় পোকামাকড় বেশি থাকে সেসব জায়গায় ছিটিয়ে দিতে হবে। দারচিনি
ও লবঙ্গর তীব্র গন্ধ পোকামাকড় সহ্য করতে পারে না। এতে পোকামাকড় আপনার ঘর ছেড়ে পালাবে।
লেবুর রস :
অনেক সময় দেখা যায় ঘরের ভেতর লাইন দিয়ে পিঁপড়াদের চলাচল করতে। পিঁপড়া
লাইনে লেবুর রস স্প্রে করে দিন এবং দেখুন কয়েকদিনের মধ্যে পিঁপড়ার উপদ্রব হবে শেষ।
লেবুর রস ঘর থেকে তেলাপোকা দূর করতেও কার্যকরী।
শসা :
তেলাপোকা রান্নাঘরে বেশি দেখা যায়। তাই কয়েক টুকরো শসা কেটে রান্নাঘরের
কোনায় কোনায়, খাবার রাখার আলমারিতে, বাসন রাখার তাকে, ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রেখে
দিন। এতে তেলাপোকা দ্বিতীয়বার ফিরে আসবে না। কেননা শসায় থাকা প্রাকৃতিক উপাদান তেলাপোকা
পছন্দ করে না। ফলে তারা এসব জায়গায় এড়িয়ে চলো।
কালোজিরা :
কালোজিরাও পোকামাকড় দূর করার ক্ষমতা রাখে। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় যেখানে
পোকামাকড়ের উপদ্রব বেশি সেখানে ছিটিয়ে রাখুন এবং কিছুদিন পরপর কালোজিরা বদলে দিন।
আরো পড়ুনঃ অমনোযোগী বাচ্চাদের পড়ায় মনোযোগী করে তোলার কিছু উপায় জেনে নিন
ধূপ:
ধূপ দিয়েও ঘর থেকে মশা-মাছি, পোকামাকড় দূর করা যায়। এজন্য আপনাকে নারকেলের
ছোবলায় আগুন জ্বালিয়ে তাতে ধূপ দিতে হবে। এতে যে ধোঁয়া তৈরি হবে এটা সারা ঘরে ছড়িয়ে
দিলেই আপনার ঘর থেকে পোকামাকড় পালাবে।
বেকিং সোডা :
বেকিং সোডা প্রাকৃতিক কিলার হিসেবে পরিচিত। তাই যেসব জায়গা গিয়ে পোকামাকড়
ঘরে প্রবেশ করে সেখানে বেকিং সোডা ছিটিয়ে দিন। দেখবেন পোকামাকড় আর ঘরে প্রবেশ করতে
পারবেনা।
স্যাভলন :
যখন ঘরবাড়ি পরিষ্কার বা মোছা হয় তখন যদি পানিতে কিছুটা স্যাভলন মিশিয়ে
নেওয়া যায় তাহলে আপনার ঘরবাড়ি জীবাণুমুক্ত ও পোকামাকড় মুক্ত থাকবে। এছাড়া পানির
সাথে স্যাভলন মিশিয়ে ঘরের বিভিন্ন জায়গায় স্প্রে করলে পিঁপড়া ও মাকড়সার মত পোকামাকড়ের
হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
প্রিয় বন্ধুরা, দেখলেন তো কি সহজে ঘরোয়া উপাদান দিয়েই পোকামাকড়ের হাত
থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আজকের আর্টিকেলটি
যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের
সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। সবাইকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেল রাইটার - প্রিয়াঙ্কা কুন্ডু