গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস

 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনাদের মধ্যে যারা মা হতে চলেছেন, তাদের সবাইকে জানাই আমার অভিনন্দন ও অনেক অনেক শুভ কামনা। একটি সুস্থ সন্তান কোলে পাওয়া প্রত্যেক মায়ের কাম্য। তবে সুস্থ সন্তান কোলে পেতে হলে গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের সঠিক স্বাস্থ্য সেবা জরুরি। কেননা এই সময় গর্ভের সন্তানের বেড়ে ওঠা ও সঠিক রক্ষণাবেক্ষন নির্ভর করে মায়ের কাছ থেকে পাওয়া পুষ্টির ওপর। তাই গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের খাদ্যাভ্যাস ও চিকিৎসা সেবার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। বন্ধুরা আজ আমরা আলোচনা করবো গর্ভবতী মায়েদের সঠিক খাদ্যাভ্যাস নিয়ে। তাহলে চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক-

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের সুষম,স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করা। মা ও সন্তান উভয়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে সুস্থ গর্ভধারণ ও সুস্থ সন্তান জন্মদানের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেড়ে যায়। আসুন আমরা জেনে নিই গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাদ্যাভ্যাস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাস।

গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাদ্যাভ্যাসঃ 

গর্ভাবস্থায় মা ও শিশু দুজনের সুস্থতার জন্য একটু বেশি পরিমানে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এই সময় শিশুর উপযুক্ত গঠন ও বিকাশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা প্রতিরোধে একটি সুষম খাবার তালিকা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সুষন খাদ্য হলো এমন একটি খাদ্য তালিকা যাতে প্রোটিন,খনিজ ভিটামিন, ক্যালোরি এবং পুষ্টিকর বিভিন্ন ধরনের খাবার নির্দিষ্ট অনুপাতে থাকে, যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য অত্যাবর্শকীয়। তাই প্রতিদিন সুষম খাদ্য পরিকল্পনা করার সময় কিছু বিশেষ উপাদানের দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

আরো পড়ুনঃ জানেন কি আপনার শরীরে ভিটামিনের অভাব হলে কি কি লক্ষণ দেখা দেবে

১. আমিষ (Proteins)

আমিষ আমাদের দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয় ক্ষতি মেরামত করে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে গর্ভকালীন সময়ে মেয়েদের আমিষ গ্রহনের দরকার হয় বেশি। কেননা ভ্রুনের সঠিক বৃদ্ধি, স্তনগ্রন্থীর বৃদ্ধি, ত্বক ও চুলের গঠন ইত্যাদি নিশ্চিত করতে আমিষ প্রয়োজন। দেনিক ৯০ থেকে ১০০ গ্রাম আমিষ দরকার হবে এ সময়ে। দুগ্ধজাত দ্রব্য, ডিম, মাছ, মাংস,ডাল, বাদাম জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমানে আমিষ রয়েছে।

২. শর্করা (Carbohydrates):

 কাজ করার জন্য আমাদের যে শক্তির প্রয়োজন হয় তা আমরা শর্করা জাতীয় খাদ্য থেকে পেয়ে থাকি। গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরির চাহিদা মেটাতে খাবার তালিকায় শর্করা থাকা অপরিহার্য। যেমন ভাত, রুটি, আলু, কর্ণ ফ্লেকস, নুডলস্‌ ও পাস্তা, ভুট্টা,ওটস্‌ ইত্যাদি প্রতিদিন গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকায় রাখতে হবে। তবে অতিরিক্ত চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন গ্রিন টির উপকারিতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

৩.  চর্বি (Fats):

 আমাদের শক্তির চাহিদা কিছু অংশ চর্বি দ্বারা পূরণ হয়। গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চর্বিযুক্ত খাবারও রাখা প্রয়োজন। তবে খাবারটি হতে হবে কম চর্বিযুক্ত যেমনঃ দুধ,দই, ডিম, পনির, বাদাম ইত্যাদি।

৪. খনিজ ও ভিটামিন (Minerals & Vitamins):

 খনিজ ও ভিটামিন আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন খনিজ ও ভিটামিন যুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। সবুজ শাক সবজি রঙ্গিন ফলমূল খনিজ ও ভিটামিনের প্রধান উৎস। রঙ্গিন ফলমূলে ও সবজিতে ক্যারোটিন থাকে যা গর্ভাবস্থায় শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে।

৫. ফাইবার (Fiber):

 ফাইবার আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে যা গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই জরুরী। সবুজ শাক সবজি ও ফলমূল ফাইবার যুক্ত খাবারের প্রধান উৎস। এগুলো খাবার হজম এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সাহায্য করে।

আরো পড়ুনঃ জেনে নিন অতিরিক্ত ওজন কমানোর সহজ কিছু উপায়

৬. পানি (Water)

পানি আমাদের খাদ্যের শোষণ,হজম এবং মলত্যাগে সহায়তা করে। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। এই সময়ে গর্ভবতীর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন এবং তাপ বিতরনের জন্যও পানি অপরিহার্য।

অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্যাভ্যাসঃ 

গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের সুষম খাদ্যের পাশাপাশি প্রয়োজন আরো কিছু পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাবার। সে গুলো হলো-

১. আয়রন (Iron) :

স্বাভাবিক অবস্থায় একজন পূর্ণবয়স্ক নারী দৈনিক ৩০ গ্রাম আয়রন দরকার হয় কিন্তু গর্ভকালীন দরকার হয় দৈনিক ৩৮ গ্রাম, কারণ আয়রন গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং সময়ের আগেই শিশুর জন্ম নেওয়ার মতো জটিলতা রোধ করে। তাই এই সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- পালং শাক, ডিম, মুরগীর মাংস, ছোলা, খেজুর ইত্যাদি তালিকায় রাখতে হবে।

২. জিংক (Zinc) :

শরীরে কোষ গঠনের জন্য জিংক জরুরি। একজন গর্ভবতীর প্রতিদিন ১১ মিলিগ্রাম জিংকের প্রয়োজন। তাই প্রতিদিন জিংক সমৃদ্ধ খাবার যেমন – ডাল, ছোলা,কাজু, চিনা বাদাম, শিমের বিচি, দুধ, মাংস ইত্যাদি খেতে হবে।

৩. ক্যালসিয়াম (Calcium) :

নবজাতকের হাড় ও দাঁত গঠনের জন্য শেষ তিন মাসে প্রচুর ক্যালসিয়াম দরকার হয়। একজন গর্ভবতী মায়ের দৈনিক অন্তত ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খেতে হবে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন- দুধ, ডিম, দই, ব্রকলি, বাঁধাকপি,ঢ়েরস, কাঁটাযুক্ত মাছ, ডুমুর, চিয়াসিড, বাদাম ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ রূপচর্চায় ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল 

৪. ফলিক এসিড (Folic Acid): 

গর্ভাবস্থায় প্রথম ১৩ সপ্তাহ ফলিক এসিড সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ফলিক এসিডের অভাবে মায়েদের রক্তসল্পতা হতে পারে। এছাড়া ফলিক এসিড সন্তানের জন্মগত বিকলঙ্গতা প্রতিরোধ করে। পালংশাক, লেটুস, ডিম, ডাল,দুধ, সিমের বিচি ইত্যাদি ফলিক এসিডের উৎস।

৫. আয়োডিন (Iodine): 

আয়োডিনের অভাবে নবজাতকের শারীরিক ও মানসিক বিকলঙ্গ হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় আয়ডিনযুক্ত লবন ও সামুদ্রিক মাছ গ্রহণ করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আমি মনে করি আজকের আর্টিকেল গর্ভবতী মায়েদের উপকৃত করবে। তাই পোষ্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভূলবেনা। সবাইকে ধন্যবাদ।

আর্টিকেল রাইটারঃ প্রিয়াংকা কুন্ডু



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url