রূপচর্চায় ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আজকাল আমরা সুন্দর হতে বা নিজের সৌন্দর্য কে ধরে রাখতে কে না
চাই,
হোক সে নারী বা পুরুষ। আর এজন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের
কসমেটিক্স ব্যবহার করে থাকি। ত্বক উজ্জ্বল করার, সজীব রাখা,চুল পরা রোধ করা,চুল ঘন ও লম্বা করা এসবের জন্য যেসব কসমেটিক্স আছে তার একটি
সাধারণত উপাদান হলো অ্যালোভেরা।যুগ যুগ ধরে রূপচর্চায় এই অ্যালোভেরা ব্যবহৃত হয়ে
আসছে।নিজেকে আকর্ষনিয় করে তুলতে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায় এই প্রাকৃতিক ভেষজ
উদ্ভিদ অ্যালোভেরার উপর।
রূপচর্চায় অ্যালোভেরা না থাকলে তা
যেন অসম্পূর্ণ। এটা ভেতর থেকে ত্বক ঠান্ডা ও পরিষ্কার রাখে। অ্যালোভেরা শুধু
উজ্জ্বল,
মসৃন ত্বক পেতেই নয়,স্বাস্থ্যজ্জ্বল
ও ঝলমলে সিল্কি চুল পেতেও সাহায্য করে। তাই আজকে আমরা আপনাদের জানাবো কিভাবে
অ্যালোভেরা জেল তৈরি করা যায় এবং রূপচর্চায় ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরা আমাদের
কিভাবে উপকার করে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক অ্যালোভেরার পরিচয় ও অ্যালোভেরা
সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য।
সূচিপত্রঃ রূপচর্চায় ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল
- অ্যালোভেরার পরিচয়
- ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি করবেন যেভাবে
- রূপচর্চায় অ্যালোভেরা জেল
- চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরার পরিচয় :
অ্যালোভেরা যাকে আমরা বাংলায়
ঘৃতকুমারী নামে চিনি। এটি রসালো প্রজাতির একটি উদ্ভিদ। ঘৃতকুমারী গাছ দেখতে অনেকটা
কাঁটাওয়ালা ফনিমনসা বা ক্যাকটাসের মত। কিন্তু এটা ক্যাকটাস নয়। এটা লিলি
প্রজাতির উদ্ভিদ। এর আদি নিবাস আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চল ও মাদাগাস্কর।আজ থেকে
প্রায় ৬০০০ বছর আগে মিশরের অ্যালোভেরা উৎপত্তি লাভ করে। এতে ৯৯%পানি ও ১% এমিলো এসিড, মিনারেল, সুগার, এনজাইম, স্যালিসাইলিক এসিড
আরো ৬৯ টি একটিভ উপাদান রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক মহাঔষধ কালোজিরার উপকারিতা ও অপকারিতা
ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরীঃ
নিজেকে সুন্দর রাখতে ত্বকে যত্ন
নেওয়া অত্যন্ত জরুরী। আর ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা জেল অসাধারণভাবে কাজ করে। তবে
বাজারজাত অ্যালোভেরা জেল না কিনে ঘরোয়া পদ্ধতিতে অ্যালোভেরা জেল তৈরি করে ব্যবহার
করলে বেশি উপকৃত হওয়া যায়। তাহলে জেনে
নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিভাবে অ্যালোভেরা জেল তৈরি করবেন -
অ্যালোভেরা জেল তৈরি করার জন্য
প্রথমে পরিষ্কার ২টা (১৫০ গ্রাম) পাতা নিতে হবে এবং নিচে গোড়ার দিকে কেটে হলুদ
রঙের রস বের হয়ে যাওয়ার জন্য ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে,এই হলুদ রঙের রসে থাকে 'লেটেক্স' যা ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে। হলুদ রস বের হয়ে গেলে
পাতা ভালোভাবে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে এবং চামচ বা ছুরি দিয়ে পাতার সবুজ অংশের ভেতর থেকে জেলটুকু তুলে আনতে হবে ও পরিষ্কার পাত্রে রাখতে হবে। এবার
একটি ব্লেন্ডারের সাহায্যে পাতার জেল, গোলাপজল ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল একসাথে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করার পরে
এগুলোতে একটু বুদবুদ দেখা দিবে। তবে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর
বুদবুদ চলে যাবে। এখন একটি কাচের বোতলে এটা স্টোর করে রাখাতে হবে। এভাবেই তৈরি করে
ফেলুন ঘরোয়া পদ্ধতিতে অ্যালোভেরা জেল। এই জেল ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করা
যাবে।
রূপচর্চায় অ্যালোভেরা জেল :
ত্বকের প্রায় সব রকম সমস্যা দূর
করতে অ্যালোভেরা নামক এই জাদুকরী ভেষজ উদ্ভিদের জুড়ি নেই। ত্বককে উজ্জ্বল ও
প্রাকৃতিক ভাবে লাবন্যময় করে তুলতে এর ব্যবহার যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। রূপচর্চায়
অ্যালোভেরা না থাকলে তা যেন অসম্পূর্ণ। আসুন জেনে নেই রূপচর্চায় অ্যালোভেরা জেলের
কার্যকারিতা -
১.ত্বক মশ্চারাইজার করে:
ত্বক নরমও সুন্দর রাখতে নিয়মিত
মশ্চারাইজার ব্যবহার করা জরুরী। আর এক্ষেত্রে অত্যন্ত ফল দায় ভূমিকা পালন করে
থাকে অ্যালোভেরা জেল। শুষ্ক ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে এলোভেরা জেল একটি আদর্শ
উপাদান। বিশেষ করে এই গরমে প্রাকৃতিক ক্রিম হিসেবে হালকা অ্যালোভেরা জেল খুবই
কার্যকর।
২.সানবার্ন দূর করে :
সানবার্ন বা রোদে পোড়া দাগ দূর করে
ত্বকের আদ্রতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এলোভেরা। অ্যালোভেরা মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার
করলে দ্রুত ত্বক থেকে পোড়া দাগ দূর হয়। এজন্য ২ চামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে ১
চামচ কফি মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে ত্বকে লাগাতে হবে ১৫ মিনিটের জন্য এবং পরে ঠান্ডা
পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে।
৩.মুখে বয়সের ছাপ দূর করে :
আমাদের অনেকের একটু বয়স বাড়ার সাথে
সাথে কপালে, চোখের নিচে, গালে, গলায় ভাজ পড়ে
যায়। এতে অল্প বয়সেই দেখতে বয়স্কদের মত লাগে। অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করে আমরা
খুব সহজেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারি। কেননা অ্যালোভেরা জেল
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান সমৃদ্ধ। এই জেল ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং এর
ভিটামিন এ, বি ও সি উপাদান ত্বকের পুষ্টি
যোগায়।
৪.ব্রণের সমস্যা দূর করে :
নারী বা পুরুষ প্রায় অনেকেরই মুখে
ব্রণ হয়ে থাকে। আর খুব সহজে সেই ব্রণ দূর করতে আমরা ব্যবহার করতে পারি অ্যালোভেরা
জেল। কেননা এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণ দূর করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। এমনকি ধীরে ধীরে
দূর হয় ব্রণের বিরক্তিকর দাগও।
৫.ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ও ত্বক
উজ্জ্বল করে :
অ্যালোভেরা জেল ত্বকের মৃত কোষ দূর
করে ত্বকে করে উজ্জল ও সতেজ। এজন্য সপ্তাহে ১-২ দিন অ্যালোভেরা জেলের সাথে ওটমিল
গুড়ো ও অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন। মুখে
লাগানোর ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে এই ফেসপ্যাক নিয়মিত
কিছুদিন মুখে লাগালে আপনার ত্বক অনেক উজ্জ্বল ও ফর্সা দেখাবে।
৬.ত্বকের যেকোনো দাগ দূর করে :
আমাদের অনেকের মুখে ব্রণের দাগ
ছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের দাগ দেখা যায়। অ্যালোভেরা জেল সেসব দাগ দূর করতে জাদুকরি
ভেষজ উপাদান। এজন্য আপনাকে অ্যালোভেরা জেল এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ভালোভাবে
মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে মুখের ত্বকের লাগাতে হবে এবং সকালে ফেসওয়াশ
দিয়ে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। এভাবে নিয়মিত করলে মুখের ত্বকের সব দাগ
খুব সহজেই দূর হবে এবং ত্বক হবে উজ্জ্বল চকচকে।
৭.ত্বকের ইনফেকশন দূর করে :
আমাদের মুখের বা শরীরের যেকোনো
ইনফেকশন দূর করতে অ্যালোভেরা জেল মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন রসুনের পুষ্টিগুণ , উপকারিতা ও অপকারিতা
চুলের যত্নে অ্যালোভেরা জেল :
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি
চুলের যত্নে হয়েছে অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। এর মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে
যা আমাদের চুলে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকে করে তোলে মজবুত ও ঝলমলে। তাহলে চলুন জেনে
নেওয়া যাক চুলের যত্নে অ্যালোভেরার কার্যকারিতা -
১.চুল করে তোলে ঝলমলে :
অ্যালোভেরা চুলের স্বাভাবিক
উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনি এবং চুলকে করে তোলে ঝলমলে। এজন্য আপনাকে ৩ চা চামচ
অ্যালোভেরা জেলের সাথে ২ চা চামচ টক দই ও ১ চা চামচ অলিভ অয়েল ভালোভাবে মিশিয়ে
চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলে লাগাতে হবে। এবার ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে যে
নিলেই বুঝতে পারবেন চুলের ঝলমলে ভাব।
২.খুশকি দূর করে :
অ্যালোভেরা জেলর অ্যান্টি
ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান চুল পরা ও খুশকির সমস্যা দূর করতে
সাহায্য করে। এলোভেরা জেলের সাথে পিয়াজের রস মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে হবে এবং
কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুলের
গোড়াও মজবুত হবে।
৩.চুল কন্ডিশনিং করে :
নারকেল তেল অথবা বাদাম তেলের সাথে
এলোভেরা জেল মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রাখতে হবে এবং পরে শ্যাম্পু দিয়ে
ধুয়ে ফেলতে হবে। এই অয়েল ট্রিটমেন্ট আপনার শুষ্ক চুলকে ডিপ কন্ডিশনিং করবে। এতে
আপনার চুল হবে ঝলমলে ও প্রাণবন্ত।
আরো পড়ুনঃ দাঁত সম্পর্কে জানা-অজানা বিভিন্ন তথ্য
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, অ্যালোভেরা জেল ত্বকের বা চুলের সব ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে এক্সপার্ট। তাই
নিজেকে সুন্দর রাখতে আপনার ব্যবহৃত বিভিন্ন বিউটি প্রোডাক্ট এর মধ্যে আপনি চোখ
বন্ধ করে রাখতে পারেন অ্যালোভেরা জেল। এই ভেষজ উপাদানটি আপনাকে সব সময় সতেজ, সুন্দর ও প্রাণবন্ত রাখবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেল রাইটারঃ প্রিয়াংকা কুণ্ডু