ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনারা জানেন কি? বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে ডেঙ্গু
জ্বর প্রতিনিয়ত ক্রমবর্ধমান হচ্ছে। এটি একটি মশাবাহিত ভাইরাস সংক্রমণ। যা মূলত এডিস
মশার কামড়ে মানুষের হয়ে থাকে। দেখা যায় প্রায় প্রতি বছরই এই জ্বরে বহু মানুষ প্রাণ
হারায়। তাই সময় থাকতে আমাদের প্রত্যেককে সতর্ক হতে হবে এবং ডেঙ্গুর প্রতিরোধ ব্যবস্থা
গ্রহণ করতে হবে।
যত দিন যাচ্ছে মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসটি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ছে। তাই আজকে
আমরা এই আর্টিকেলে ডেঙ্গু জ্বর কি, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে
আলোচনা করব। জনস্বার্থে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ দেখার অনুরোধ রইলো।
ডেঙ্গু ভাইরাস বা ডেঙ্গু জ্বর কি :
ডেঙ্গু হচ্ছে এডিস গোত্রের স্ত্রী মশা বাহিত এক ধরনের ভাইরাস। যা ডেঙ্গু
জ্বরের জন্য দায়ী। একজন ব্যক্তি তখনই এই ভাইরাসের আক্রান্ত হয় যখন এডিস মশা কোন সংক্রামিত
ব্যক্তিকে কামড়ানোর পরে ভাইরাস বহন করার সময় অন্য একজন অ-সংক্রামিত ব্যক্তিকে কামড় দেয়। কয়েক প্রজাতির
স্ত্রী এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রধান বাহক।
সেগুলোর মধ্যে এডিস ইজিপ্টি স্ত্রী মশা প্রধান।
প্রধানত বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরের মত গ্রীষ্ণমন্ডলীয় দেশগুলোতে এই ভাইরাসের প্রকোপ খুব বেশি। ডেঙ্গু ভাইরাসের হার সবচেয়ে বেশি থাকে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত এবং এপ্রিল মাসে এই হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। জুন জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গু আক্রমণের সংখ্যা সাধারণত হ্রাস পেতে দেখা যায়।
আরো পড়ুনঃ জেনে নিন রসুনের পুষ্টিগুণ , উপকারিতা ও অপকারিতা
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ :
ডেঙ্গু জ্বর হলো একটি মশা বাহিত ভাইরাস জনিত রোগ। প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ ডেঙ্গু ভাইরাসের
আক্রান্ত হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রথমবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর বিশেষ কোনো লক্ষণ
দেখা যায় না। ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ লক্ষণ গুলো হল -
১.সাধারণত ডেঙ্গু ভাইরাসের লক্ষণ
হচ্ছে জ্বর। জ্বর ১০১ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় হতে পারে। জ্বর একটানা থাকবে
আবার ঘাম হয়ে জ্বর ছেড়ে যাবে এবং পরবর্তীতে আবারো জ্বর হতে পারে।
২.আক্রান্ত রোগীর জ্বরের সাথে সাথে শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখ ও চোখের
পেছনে ব্যথা অনুভব হবে।
৩.শরীরের জয়েন্টে ব্যথা হবে এবং ত্বকের বিভিন্ন স্থানে লাল লাল ফুসকুনি দেখা দেবে।
৪.রোগীর বমি হওয়ার সাথে সাথে ক্ষুদা কমে যাওয়ার লক্ষণও দেখা দেবে।
এই উপসর্গগুলি রোগ সংক্রমণের ৪ থেকে ১০ দিনের মধ্যে দেখা যায়। সাধারণত
২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত উপসর্গগুলি স্থায়ী হতে পারে।
সিভিয়ার ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তীব্র পেট ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, রক্ত বমি,
দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকার্য দ্রুত হওয়া, শরীর ঠান্ডা অনুভব করা,দ্রুত
নাড়ি স্পন্দন এবং ঘুম ঘুম ভাব ও চেতনা হারানো প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেবে।
আরো পড়ুনঃ ভাদ্র মাসে বাঙালির প্রিয় তালের বড়া
ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিকার ও প্রতিরোধ :
ডেঙ্গু জ্বরে অনেকে বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায় এবং দেরিতে চিকিৎসার জন্য
মৃত্যুবরণও করছে।এই জ্বরের প্রতিরোধী টিকা কয়েকটি দেশে অনুমোদিত হয়েছে। তবে এই টিকা
শুধু একবার সংক্রামিত হয়েছে এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কার্যকর। মূলত এডিস মশার কামড়
এড়িয়ে চলাই এর প্রতিরোধের প্রধান উপায়। ডেঙ্গু জ্বরের সাধারণ প্রতিকার ও প্রতিরোধ
গুলো হলো -
১.ডেঙ্গু জ্বর হলে পরিপূর্ণ বিশ্রাম
নিতে হবে এবং বেশি করে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।
২.জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল বা এজাতীয় ওষুধ সেবন করতে হবে।
৩.ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও ননস্টেরয়েডাল
প্রদাহপ্রশমী ওষুধ সেবন করা যাবে না।এর ফলে রক্তপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
৪.ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা জমে থাকা পানিতে বংশবিস্তার করে। নিয়মিতভাবে
বাড়ির আশেপাশে কোন পাত্রে, ফুলের টবে, কোন গর্তে বা কোন জায়গায় পানি তিন থেকে চার
দিন জমে আছে কিনা সেটা খেয়াল রাখতে হবে এবং পানি থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে।
৫.ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয়
থাকে। তাই এই সময় সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
৬.রাতে শোবার সময় অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে এবং দিনে মশা নিরোধক কেমিক্যাল,
যেমন-কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করতে হবে।
৭.মশার প্রকোপ বেশি হলে প্রয়োজনে শরীরের বেশিরভাগ অংশ ঢেকে রাখে এমন পোশাক
পরিধান করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ একজন সাধারণ কবির অসাধারণ কবিতা
ডেঙ্গু জ্বর একটি সাধারণ রোগ কিন্তু অবহেলা করলে তা মারাত্মক হতে পারে।
এই জ্বর কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আশায় কোন বাধা নেই।
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা উপকৃত হবেন। সবাই সুস্থ
থাকুন, ভালো থাকুন ও সচেতন থাকুন, সবাইকে ধন্যবাদ।
আর্টিকেল রাইটার - রুমন কুণ্ডু