বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম

বাংলাদেশ চিংড়ি মাছ অনেক জনপ্রিয়। চিংড়ি মাছ চাষ করে অনেক মানুষ লাখোপতি হচ্ছে। বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে আজকে আলোচনা করা হবে। যদি আপনি চিংড়ির ভালো ফলন পেতে চান তাহলে বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। আজকে আর্টিকেলে বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম বলা হবে।

আপনি যদি শেষ পর্যন্ত এই আর্টিকেলে থাকেন তাহলে বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম গুলো জেনে নেওয়া যাক।

কনটেন্ট সূচিপত্রঃ বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম

বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়মঃ ভূমিকা

দেশজুড়ে চিংড়ি মাছের চাহিদা রয়েছে অনেক। কারণ চিংড়ি মাছের উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। শুধু বাংলাদেশ নয় বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে চিংড়ি মাছ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। অনেক মাছ চাষী রয়েছে যারা চিংড়ি মাছ চাষ করে প্রচুর পরিমাণে অর্থ উপার্জন করছে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো।

বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম

চিংড়ি মাছের অনেকগুলো জাত রয়েছে তার মধ্যে বাগদা চিংড়ি একটি। বাংলাদেশ বাগদা চিংড়ি চাষ হয়। যার বাজার চাহিদাও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। বাংলাদেশের বাজারে চাহিদা পূরণ করে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। এখন আমরা বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে জানাবো যে গুলো অনুসরণ করে আপনি ভালো চিংড়ি উৎপাদন করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ ছাত্রদের টাকা আয় করার ২০টি কার্যকরী উপায়

পোনা সংগ্রহঃ

বাগদা চিংড়ি চাষ করার জন্য আপনাকে প্রথমে তার পোনা সংগ্রহ করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটতম যে কোন নার্সারিতে গিয়ে বাগদা চিংড়ি মাছের পোনা পেয়ে যাবেন। আপনি যদি বাড়িতে চৌবাচ্চার মধ্যে বক্তা চিংড়ি চাষ করতে চান তাহলে আপনাকে বাগদা চিংড়ির পোনা পলিব্যাগে ভরে চৌবাচ্চার পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এর পরে আস্তে আস্তে ব্যাগটি খুলে চিংড়ি মাছের পোনা গুলোকে ছেড়ে দিতে হবে।

চিংড়ি মাছের খাবারঃ

আপনি যদি চিংড়ি মাছের ভালো ফলন পেতে চান তাহলে আপনাকে প্রতিনিয়ত উপযুক্ত খাবার প্রয়োগ করতে হবে। যদি নিয়মিত খাবার প্রদান করা না হয় এটি চিংড়ি মাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। চিংড়ি মাছের খাদ্য হিসেবে আপনি শামুক ঝিনুক, কাঁকড়া, চাল ডাল গম ভুট্টা ইত্যাদি দানা জাতীয় খাদ্য গুলো দিতে পারেন।

সার প্রয়োগঃ

যেকোনো চাষ পদ্ধতি ভালো ফলন পেতে হলে আপনাকে নিয়মিত এবং সঠিক পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করতে হবে। চিংড়ি মাছ ও তার বিপরীত নয়। সঠিকভাবে চিংড়ি মাছ চাষ করার জন্য আপনাকে নিয়ম অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে।

রোগ নির্ণয় এবং প্রতিকারঃ

মানুষের যেমন রোগ হয় ঠিক তেমনি চিংড়ি ও রোগ হয়ে থাকে। চিংড়ি মাছের জীবনকাল এক বা একাধিক অস্বাভাবিক অবস্থা যা চিংড়ি মাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে এবং এ অবস্থাতে চিংড়ি মাছ গুলো মারা যায়। এছাড়া অনেক সময় চিংড়ি মাছে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া অণুজীব ছত্রাক ইত্যাদি আক্রমণ করতে পারে। তাই আপনাকে একটি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

বাগদা চিংড়ির যত্নঃ

আপনি যদি বাড়িতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেন তাহলে অবশ্যই যে পাত্রে চিংড়ি মাছ চাষ করবেন তার নিচে কোন রকমের ময়লা জমে জমে থাকলে তা পরিষ্কার করতে হবে। কোন চিংড়ি মাছ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে সেটিকে আলাদা করে নিতে হবে। পানির তাপমাত্রা ঠিক আছে কিনা তা লক্ষ রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নিয়মিত পানি পরিবর্তন করতে হবে।

গলদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম

গলদা চিংড়ি Giant Fresh water Prawn নামে পরিচিত। গলদা চিংড়ির চাহিদা রয়েছে অনেক। এটি বাংলাদেশের উৎপাদন হয় যা বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ও রপ্তানি করা হয়। বাইরে রপ্তানি করার সুযোগ আছে তা-ই চিংড়ি মাছের দাম বেশি থাকে। গলদা চিংড়ি আপনি দুই পদ্ধতিতে চাষ করতে পারবেন একটি হলো একক চাষ পদ্ধতি এবং মিশ্র চাষ পদ্ধতি।

আরো পড়ুনঃ নীলফামারী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

একক চাষ পদ্ধতিঃ

একক চাষ পদ্ধতি বলতে শুধুমাত্র গলদা চিংড়ি চাষ পদ্ধতি কে বোঝায় সেখানে আর অন্য কোনো ধরনের মাছ থাকবে না। এই চাষ পদ্ধতিতে প্রতি শতকে ১০০-১১০ টি গলদা চিংড়ির পোনা মজুদ করা যায়। গলদা চিংড়ির একক চাষ পদ্ধতিতে প্রতি একরে উৎপাদন প্রায় 500 কেজি হয়ে থাকে। তাহলে বুঝতে পারছেন যে একক পদ্ধতিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে ফলন ভালো পাওয়া যায়।

পুকুর প্রস্তুতঃ

আপনি যদি গলদা চিংড়ি চাষ করতে চান তাহলে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। গলদা চিংড়ি চাষের জন্য পুকুরের তলদেশে কোনরকম কাদা থাকা যাবে না। পুকুর প্রস্তুত করার সময় কয়েক কেজি চুন দিয়ে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। পুকুরে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এরকম ব্যবস্থা করতে হবে। উপরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি রাখতে হবে।

গলদা চিংড়ির খাবারঃ

গলদা চিংড়ি ভালো ফলন পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই এই দিকটি ভালোভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। গলদা চিংড়ির খাবার হিসেবে আপনি ভুট্টা গম, সয়াবিন, ডাবরি ডাল সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বাণিজ্যিকভাবে ও বড় আয়তনের গলদা চাষের ক্ষেত্রে বাজারে প্রচলিত ভালো কোম্পানি রেডি চিংড়ির ফিড ব্যবহার করা সব থেকে ভালো।

রোগবালাই ও পরিচর্যাঃ

গলদা চিংড়ি চাষের সময় পুকুরের পরিবেশ যদি ঠিক থাকে তাহলে গলদা চিংড়ির কোন ধরনের রোগ হয় না। যদি পুকুরের পরিবেশ ঠিক না থাকে তখন মাছের বিভিন্ন রকম রোগ দেখা দিতে পারে এমনকি অনেক মাছ মারাও যেতে পারে। বিভিন্ন সময় চিংড়ি মাছের রোগ দেখা দিতে পারে যদি আপনি সঠিক সময়ে চিকিৎসা করেন তাহলে তা ভালো হয়ে যাবে। তাই আপনাকে এই দিকটি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে

বাগদা চিংড়ির অর্থনৈতিক গুরুত্ব

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চিংড়ি মাছের গুরুত্ব রয়েছে অনেক। প্রতিবছর বাংলাদেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে চিংড়ি মাছ রপ্তানি করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদনের প্রায় সম্পূর্ণটাই চিংড়ি খামারের মাধ্যমে হয়ে থাকে। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশেও মাছের খামার এর মধ্যে চিংড়ি মাছ চাষ করা হয়।

আরো পড়ুনঃ ইলিশ উৎপাদনে বাংলাদেশ কততম - ইলিশ উৎপাদনে শীর্ষ দেশ কোনটি

অন্যান্য দেশগুলোতে বেশিরভাগ চিংড়ি খামারে উৎপাদন করা হয়। সে দেশগুলোর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ভারত ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো ইত্যাদি। যারা খামার এর মাধ্যমে চিংড়ি মাছ উৎপাদন করে থাকে। এবং এখান থেকে প্রতিবছর প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে।

উপসংহারঃ বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম

বাগদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম, গলদা চিংড়ি মাছ চাষ করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি এই আর্টিকেল থেকে উক্ত দুইটি চিংড়ি মাছের জাতের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ। ২০৮৭৬ 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url