ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান? তাহলে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি আজকে আমরা আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করব। এর সাথে ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও আপনারা জানতে পারবেন। আমরা ইলিশ মাছ সকলেই খাই কিন্তু ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানি না।

আপনি যদি শেষ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকেন তাহলে ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। তাহলে চলুন দেরী না করে ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

 ভূমিকা

ইলিশ মাছ খেতে আমরা অনেকেই পছন্দ করি। যদিও ইলিশ মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে কাটা থাকে তার পরেও মানুষ ইলিশ মাছ কিনে খাই। ইলিশ মাছের দাম অন্যান্য মাছের থেকে অনেক বেশি। ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে অন্যান্য মাসের চেয়ে বেশি। তাই আজকে আরে আমরা ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। তাহলে চলুন ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা শুরু করা যাক।

ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা

বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ মাছ। ইলিশ মাছ হল সামুদ্রিক মাছ। বাঙালির কাছে ইলিশ মাছ খুবই জনপ্রিয় একটি মাছ। এছাড়া ইলিশ মাছ ভারতের বিভিন্ন এলাকার যেমন পশ্চিমবঙ্গ উড়িষ্যা ত্রিপুরা ইত্যাদি এলাকাগুলোতে অনেক জনপ্রিয়। বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ উৎপাদন হয়। তা বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে রপ্তানি করা হয়। ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। তা আজকে আমরা আলোচনা করব

আরো পড়ুনঃ বাচ্চা না হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

ইলিশ মাছের উপকারিতা -

হার্টের জন্য উপকারীঃ

ইলিশ মাছের স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম রয়েছে। ইলিশ মাছে থাকা ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড মানবদেহের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে যার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। তাই ইলিশ মাছ হার্টের জন্য উপকারী।

রক্ত সঞ্চালন এর ক্ষেত্রেঃ

সামুদ্রিক মাছে এমনিতেই অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেহেতু ইলিশ মাছ একটি সামুদ্রিক মাছ তাই এতে ইপিএ ও ডিএইচএ ওমেগা থ্রি তেল শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন তৈরি করতে বাধা দেয়। যার ফলে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মাছ খেলে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়।

খনিজ উৎপাদনে ভূমিকা রাখেঃ

ইলিশ মাছে রয়েছে পটাশিয়াম আয়োডিন জিংক ইত্যাদি। ইলিশ মাছের পুষ্টি উপাদানগুলো ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ইলিশের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান দাঁত সুস্থ রাখতে এবং হার এর পুষ্টি যোগান দিতে এর ভূমিকা রয়েছে।

মস্তিষ্কের জন্য উপকারীঃ

ইলিশ মাছের পুষ্টি উপাদান স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের মস্তিষ্কের ৬০% তৈরি ফ্যাট দিয়ে। যার মধ্যে অধিকাংশ ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড। আপনি যদি আপনার সন্তানের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে চান এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে চান তাহলে অবশ্যই ইলিশ মাছ খাবেন।

বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করেঃ

আপনি যদি বাতের ব্যথায় ভুগে থাকেন তাহলে প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় সামুদ্রিক মাছ রাখবেন এতে করে বাতের ব্যথা গাঁট ফুলে যাওয়া ইত্যাদি যন্ত্রণা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে।

চোখের জন্য উপকারীঃ

আমরা অনেকেই এটা জানি যে তেলযুক্ত মাছ খাওয়ার ফলে চোখের উপকারিতা পাওয়া যায়। বয়স হওয়ার সাথে সাথে আমাদের দৃষ্টি কমতে থাকে এই সমস্যা থেকে দূর করতে ইলিশ মাছের উপকারিতা রয়েছে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড আমাদের এই সমস্যা থেকে দূর করে। ইলিশ মাছে থাকা ভিটামিন-এ রাতকানা রোগ মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।

ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করেঃ

ইলিশ মাছের থাকে প্রোটিন যা কোষের যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়িয়ে কোষের সার্বিক কার্যকারিতা বাড়ায়। এছাড়া ইলিশ মাছে রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এবং ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পেটের বিভিন্ন রকম সমস্যা দূর করেঃ

ইলিশ মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড। ইলিশ মাছের পুষ্টি উপাদান আমাদের পেটের সমস্যা যেমন আলসার কোলাইটিস ইত্যাদি কমাতে সাহায্য করে।

শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব দূর করেঃ

আমাদের সুস্থ থাকার জন্য ভিটামিন টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ইলিশের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি। ইলিশ মাছকে ভিটামিন ডি এর উৎস বলা হয়। মানবদেহে ক্যালসিয়াম ফসফেট এর কার্যকরিতা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

ফুসফুসের জন্য কার্যকরীঃ

মানব শরীরে ফুসফুস একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সামুদ্রিক মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে তাই ইলিশ একটি সামুদ্রিক মাছ হাওয়াই এটি মানব শরীরের ফুসফুসকে ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যারা নিয়মিত মাছ খায় তাদের ফুসফুস অন্যদের তুলনায় ভালো থাকে।

ইলিশ মাছের অপকারিতা -

আমরা জানি যে যে জিনিস এর উপকারিতা রয়েছে তার কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। ইলিশ মাছ তার বিপরীত নয়। যাদের এলার্জি সমস্যা রয়েছে তাদের ইলিশ মাছ খেলে এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এটি একটি প্রধান সমস্যা। যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা ইলিশ মাছ থেকে দূরে থাকুন।

যাদের কোন ধরনের এলার্জি সমস্যা নেই, গ্যাস্টিকের সমস্যা নেই তারা তাদের খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ইলিশ মাছ থাকতে পারে এতে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। আশা করি ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশের প্রায় সকল মানুষ জানে যে ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। দামি মাছ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। আপনি ইতিমধ্যে ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনেছেন। এখন ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানবেন। ইলিশ মাছ Clupeiformes গোত্রের Tenualosa গণের সদস্য। ইলিশ মাছের দেহ অনেক চ্যাপ্টা এবং পুরু। ইলিশ মাছের মাথা উপরিতল পুরু ত্বকে ঢাকা।

আরো পড়ুনঃ বজ্রপাত কেন হয় ইসলাম কি বলে

ধাতব রুপালি রঙের শরীর সুবিন্যাস্ত মাঝারি আকারের অংশে আবৃত। ইলিশ মাছের দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৬০ সেমি। সবথেকে বড় আকারের ইলিশের ওজন হয় প্রায়ই ২.৫ কিলোগ্রাম। ইলিশ মাছ কয়েক বছরের মধ্যেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়।

ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম

ইলিশ মাছের একটি বৈজ্ঞানিক নাম রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে বিভিন্ন রকম পরীক্ষায় আমাদের এই ধরণের বৈজ্ঞানিক নাম চলে আসে। তাই অবশ্যই আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ এর বৈজ্ঞানিক নাম সম্পর্কে জানা উচিত। ইলিশ মাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল Tenualosa ilisha, ইলিশ মাছের ইংরেজি নাম হল Hilsa shad

ইলিশ মাছের জীবন চক্র

প্রিয় বন্ধুরা আপনারা ইতিমধ্যে ইলিশ মাছ সম্পর্কে অনেকগুলো বিষয় জানতে পেরেছেন। তার থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানা। ইলিশ মাছের জীবন চক্র কেমন হয় এ বিষয়টি জেনে নেই সাধারণত কয়েক বছরের মধ্যেই ইলিশ মাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যায়। ইলিশ মাছ এক বছরে দুইবার প্রজননে অংশগ্রহণ করে থাকে।

ইলিশ মাছের প্রজনন কাল শুরু হয় অক্টোবর-নভেম্বর এর দিকে অর্থাৎ শীতকালে। শীতের শেষে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ এপ্রিল মাসের দিকে শুরু হয়। একটি মা ইলিশ প্রজনন কালে আড়াই থেকে 16 লক্ষ ডিম দিতে পারে। ইলিশ মাছের আকৃতি, ইলিশ মাছের ওজন সবকিছু নির্ভর করে স্থান এবং পরিবেশের উপর।

ইলিশ মাছের প্রকারভেদ

আমরা সকলেই জানি যে ইলিশ মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে ইলিশ উৎপাদন হয় যা থেকে বাংলাদেশ একটা নির্দিষ্ট অর্থ উপার্জন করে। বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হয়। বাংলাদেশের সাধারণত তিন প্রজাতির ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো Tenualosa ilisha, T toli ও T. kelee।

ভিন্ন তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে তিন প্রজাতির ইলিশ পাওয়া যায় যথা পদ্ম ইলিশ চান্দিনা ইলিশ ও গুর্তা ইলিশ। এই প্রজাতি গুলোর মধ্যে একমাত্র পদ্ম ইলিশ নদীতে পাওয়া যায়। অন্যান্য প্রজাতির ইলিশ কখনো নদীতে আসে না এগুলো সমুদ্রে পাওয়া যায়।

ইলিশ মাছের সর্বোচ্চ ওজন

ইলিশ মাছের ওজন তারা আকার নির্ভর করে তার বেড়ে ওঠার পরিবেশের উপর। বিভিন্ন জায়গার ইলিশ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। তবে বড় আকারের ইলিশের ওজন হয় ২.৫ কিলোগ্রাম। কিছু ইলিশ আছে যার ওজনের থেকে বেশি অথবা এর থেকেও কম হতে পারে।

ইলিশ মাছ সংরক্ষণের পদ্ধতি

অনেক সময়ে বাজারে ইলিশ মাছের দাম ওঠানামা করে। মাঝে মধ্যে আছে যে ইলিশ মাছের দাম অনেক বেড়ে যায় তখন মানুষ ইলিশ মাছ কিনে সংরক্ষণ করতে চাই কিন্তু ইলিশ মাছ সংরক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। তাই এখন আমরা ইলিশ মাছ সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করব। যার মাধ্যমে আপনি সহজেই দীর্ঘদিন ধরে ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করতে পারবেন।

ইলিশ মাছ সংরক্ষণের পদ্ধতি - ১ঃ প্রথমে আপনাকে ইলিশ মাছ টুকরো করে কেটে নিতে হবে। এরপর মাছ প্রতি এক চা চামচ হলুদ গুড়া, এক চা চামচ মরিচের গুঁড়া আধা চামচ ধনে গুঁড়া ও পরিমাণ মত লবণ দিয়ে মাছগুলোকে ভালোভাবে মাখিয়ে দিতে হবে। এরপর মাছের টুকরোগুলো কে টাইট প্যাকেটে ভরে নিতে হবে। এবার প্যাকেট থেকে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এভাবে আপনি প্রায়ই 6 মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ নীলফামারী জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

ইলিশ মাছ সংরক্ষণের পদ্ধতি - ২ঃ এর থেকে বেশী দিন ধরে ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করতে চাইলে সম্পূর্ণ মাছ টিকে না কেটে প্যাকেটে করে সম্পূর্ণ মাসটিকে ফ্রিজে রেখে দিন। এভাবে রাখলে আপনি আরো দীর্ঘদিন ধরে ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করতে পারবেন।

ইলিশ মাছ ফ্রিজে রাখার নিয়ম

আপনি যদি ইলিশ মাছ কিনে সংরক্ষণ করতে চান তাহলে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। এতে আপনি দীর্ঘদিন ধরে ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করতে পারবেন। সাধারণত অন্যান্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছের দাম একটু বেশি মাঝেমধ্যে এর দাম বেড়ে যায়। তখন মানুষ মাছ কিনে তা ফ্রিজে রাখতে চাই কিন্তু ফ্রিজে রাখার নিয়ম সম্পর্কে জানেনা।

আপনি চাইলে সম্পূর্ণ মাস থেকে কিনে এনে প্যাকেট সহ ভালো মতো করে মাছটি ভরে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। অথবা ইলিশ মাছটিকে টুকরো টুকরো করে কেটে এতে বিভিন্ন রকম মসলা দিয়ে সে গুলোকে ভালোমতো মাছের সাথে মিশিয়ে প্যাকেটে করে ভরে ফ্রিজে রাখা যায়।

উপসংহারঃ 

ইলিশ মাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তার সাথে ইলিশ মাছের আরো অনেকগুলো বিষয় আমাদের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনি আমাদের আর্টিকেল থেকে আপনার কাঙ্খিত বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আপনার এবং আপনার পরিবারের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ধন্যবাদ।  

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url